Sunday, 24 May 2015

তালেবানের জবানিতে তালেবান না মুক্তিযোদ্ধা

1 Comment
যুদ্ধ চলাকালে এবং যুদ্ধের পর পরাজিত শক্তির কথা খুব কমই শোনা যায়। তালেবানও এখন একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। আট বছর ধরে চলমান যুদ্ধ নিয়ে তারা, বিশেষ করে তাদের সাধারণ যোদ্ধারা কী ভাবছেন তা জানা যায়নি। যারা এসব কাহিনী পৃথিবীকে জানাবে সেই সাংবাদিকরা অপহরণ বা নিহত হওয়ার ভয়ে তাদের কাছে যেতেও চান না।
এ যাবত ভিন্ন কাহিনী শুনলেও, হঠাৎ করেই পশ্চিমা গণমাধ্যমে তালেবানদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই তুলে ধরা হচ্ছে। খোদ মার্কিন জেনারেলরাই বলছেন আফগানিস্তানে তাদের বিজয় অর্জন অনিশ্চিত।
আফগানিস্তানে তালেবানরা কতটা শক্তিশালী এবং কিভাবে কাজ করেন আর কেন-ই বা তারা তালেবান হলেন তার বিবরণ এসেছে নিউজ উইকের এক রিপোর্টে। নিউজ উইকের সাংবাদিক সামি ইউসুফজাই ২০০১ সাল থেকে এই ম্যাগাজিনে আফগান যুদ্ধের সংবাদ সরবরাহ করছেন।
দীর্ঘ এই সময়ে তিনি বেশ কয়েকজন তালেবান যোদ্ধার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তাদেরই ছয়জনের কথা এখানে তুলে ধরা হলো। এই প্রতিবেদন তৈরিতে ইউসুফজাইয়ের সাথে ছিলেন নিউজউইকের রন মরেউ। নিউজউইকের রিপোর্টের আলোকে এটি রচনা তৈরি করেছেন ফুয়াদ ফয়সাল]

মৌলভি মোহাম্মদ হাক্কানি
বয়স : ৪০ । সাবেক তালেবান উপমন্ত্রী। এখন নতুন তালেবান সদস্য সংগ্রহ ও তাদের পক্ষে প্রচারণার দায়িত্ব পালন করছেন।
আমেরিকার ওপর ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার দুই দিন আগে মাসুদের (নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের কমান্ডার আহমদ শাহ মাসুদ) মৃত্যুতে আমরা উল্লাস করেছিলাম (টেলিভিশন সাংবাদিকের ছদ্মবেশে আলকায়েদা এজেন্টরা তাকে হত্যা করেছিল)। তার বাহিনী তত দিনে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল। তাই তার মৃত্যু মানে ছিল আফগানিস্তানে আমাদের বিজয় সম্পূর্ণ হওয়া। কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বরের আক্রমণ আমাদের আনন্দকে গভীর উদ্বেগে পরিণত করল। আমরা সেই উটগুলোকে (আফগানরা আরবদের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করতে এ শব্দই ব্যবহার করে) আমাদের দেশে অবাধে চলাচল করতে দিয়েছিলাম। আর তারা আমাদের জন্য ধ্বংস ডেকে আনল। আমরা জানতাম, আমেরিকা প্রতিশোধ নিতে আমাদের ওপর হামলা চালাবে।

বিপদ বুঝতে পেরে আমি সাথে সাথে আমার স্ত্রী ও সন্তানদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিলাম। সরকার পুরোপুরি ভেঙে পড়তে লাগল। আমি ভাবতেই পারিনি মার্কিনি নির্বিচার বোমা হামলার মুখে সরকারের এত প্রতিরোধ শেষ হয়ে যাবে। প্রত্যেকেই নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে রায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বোমা হামলা শুরুর পর আমি আমার ধর্মীয় নেতার স্বাভাবিক সাদা জোব্বা ছেড়ে পুরনো বাদামি সালোয়ার-কামিজ পরে পাকিস্তান রওনা হলাম। হেঁটে পর্বতমালা পাড়ি দিলাম এবং পর্বতশীর্ষে উঠে পেছনে ফিরে বললাম : ‘আল্লাহ তোমার সহায় হোন, আফগানিস্তান। আমাদের ইসলামি রাষ্ট্রে আমি আর কখনো ফিরে আসব না। আমার পিতা, ভাই এবং পরিবারের সবাই পাকিস্তানের মানশেহরা উদ্বাস্তু শিবিরে চলে গিয়েছিল। কিন্তু আমি ভাবলাম, তাদের কাছে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। অনেকেই আমার পরিচয় জানে এবং তাদের অনেকেই তালেবান সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করে না; তাই আমি বরং কাছের একটি মসজিদে আশ্রয় পেলাম। আমি মাঝে মধ্যে চোরের মতো লুকিয়ে মধ্যরাতে সন্তানদের দেখতে যেতাম। তারা কাবুলের বাসায় ফিরে যেতে চাইত। ২০০৩ সালের প্রথম দিকে পরিবার নিয়ে পেশোয়ারে এক ভাড়াবাড়িতে উঠলাম। ২০০১ সালের পর এই প্রথম নিজের একটি ঠিকানা হলো। আবার মোল্লাদের সেই সাদা জোব্বা পরলাম। আর তখনই কাকতালীয়ভাবে এক দিন তালেবান প্রতিরামন্ত্রী মোল্লা ওবায়েদউল্লাহর সাক্ষাৎ পেলাম। তালেবানের পতনের পর এ-ই প্রথম কোনো সিনিয়র নেতাকে দেখলাম। তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া তালেবান বাহিনীকে পুনর্গঠনের জন্য সমগ্র পাকিস্তান ঘুরছিলেন। তিনি জানালেন, তালেবান আন্দোলনের অর্ধেক নেতা এখন একে অন্যের সংস্পর্শে ফিরে এসেছে এবং তারা আমেরিকানদের হটানো ও প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করতে দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ। এটা সম্ভব বলে আমার মনে হয়নি, তবে আমি সহায়তা করার প্রতিশ্র“তি দিলাম। দুই সপ্তাহ পর তার দেয়া ঠিকানামতো এক জায়গায় গিয়ে উচ্চপদস্থ অনেক তালেবানকে দেখতে পেলাম। তারা সবাই একসাথে বসে আমেরিকানদের হটানোর ব্যাপারে কথা বলছিলেন। ওবায়দউল্লাহ আমাকে বললেন, ‘আমাদের কোনো উপমন্ত্রী বা আমলার প্রয়োজন নেই। আমরা চাই, আপনি আমাদের জন্য যত সম্ভব যোদ্ধা সংগ্রহ করবেন।  ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসন আমাদের জন্য খুবই ফলপ্রসূ হয়েছিল। এতে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার নজর সরে গিয়েছিল। ২০০৪ পর্যন্ত আমরা শুধু সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যে একে-৪৭ আর আরপিজি ব্যবহার করতাম, সেগুলোই ছিল। তারপর আমরা নতুন নতুন অস্ত্র ও প্রযুক্তি করায়ত্ত করতে লাগলাম। রাস্তার পাশে আইইডি পাতলাম, আত্মঘাতী হামলা চালাতে লাগলাম। অনেক তালেবান কমান্ডারকে হত্যা ও গ্রেফতার করা হলেও তারা আমাদের দমাতে পারেনি। আমরা এখন আর বিদেশী, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কিংবা আলকায়েদার ওপর নির্ভরশীল নই। আমরা এখন বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছি। আলকায়েদা শক্তিশালী বলে মার্কিনিরা যে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে, তা মিথ্যা। তারা দুর্বল। আমরা এখন আমাদের হয়ে যেসব বিদেশী কাজ করছে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক। আর এসব উটকে অবাধে চলাচল করতে দেয়া উচিত নয়।
মৌলভি আবদুর রহমান আখুন্দজাদা
বয়স : ৪০। উত্তর আফগানিস্তানে ৪ শ’ তালেবানের কমান্ডার ছিলেন। মার্কিন হামলার পর পাকিস্তানের চলে আসেন তিনি। এবং সেখানেই সবজি বিক্রি করে জীবন যাপনের চেষ্টা করেন। এখন ৫০ জন তালেবান যোদ্ধা নিয়ে আফগানিস্তানের ৩টি প্রদেশে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।  বোমা হামলা শুরুর সময় আমি মাজার-ই-শরিফের কাছে যুদ্ধেত্রে প্রায় ৪০০ যোদ্ধার নেতৃত্বে ছিলাম। ক্ষেতে কাটা গমের মতো তাদের বোমায় আমাদের লোকজন কাতারে কাতারে মরতে লাগল। দেহগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। আমরা মৃতদের দাফন করতে পারছিলাম না। পরিখাতেই যোদ্ধারা মরতে লাগল। আমি আত্মসমর্পণের কথা ভাবিনি। তবে করণীয় কী তা ঠিক করতে পারছিলাম না। তাই কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে সরে পড়লাম। সব কিছুই ছিল আমাদের প্রতিকূলে। কাবুলে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। খাবার পানি ছাড়াই আমরা পুরু বরফের ওপর দিয়ে চার দিন হাঁটলাম। পর্বতশীর্ষ থেকে বন্যপশু বিবেচনা করে আমাদের দিকে গুলি ছোড়া হচ্ছিল। পঞ্চম দিনে হাঁটতেও পারছিলাম না। আমি অস্ত্র লুকিয়ে এক গ্রামে গিয়ে বললাম, আমি পথহারা পথিক।
আমি তাদের কাছে খাবার চাইলাম। গ্রামবাসী আমাকে খাবার দিলো। তবে কমান্ডারদের সাথে যোগাযোগ করার কোনো পথ বের করতে পারলাম না। হাঁটতে শুরু করলাম। একটি মিনিবাস দেখে বন্দুক তাক করে সেটিকে থামাতে বাধ্য করলাম। সেটি ছিল তালেবানে ভর্তি। তারা বলল, এক ইঞ্চি জায়গাও নেই। কিন্তু আমি হুমকি দিলাম, আমাকে সাথে না নিলে আমি টায়ারে গুলি করব। তাদের পায়ের নিচে আমাকে শুতে হলো। কিন্তু তবুও কয়েক দিনের মধ্যে উষ্ণতার পরশ পেলাম। পরদিন সকালে কাবুল-কান্দাহার মহাসড়কের একটি চেকপয়েন্টে স্থানীয় একদল যোদ্ধা আমাদের আটক করল। আমরা তখন মৃতপ্রায়। মুখগুলো শুকনো, ফেটে গেছে, ঠোঁট দিয়ে রক্ত ঝরছে। মনে হচ্ছিল কেয়ামতের দিন এসে গেছে। এক মাস পর ঈদের আনন্দের মধ্যে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলাম। আমাদের ইসলামি রাষ্ট্র ৪০ দিনও প্রতিরোধ করতে পারল না। আমি বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি ভাবলাম, আল্লাহ আমাদের আবার বিজয়ী করবেন, কারণ ইসলামের রাস্তাতেই সব রক্ত ঝরেছে। এক সময় তালেবান মোল্লারা ছিলেন গর্বিত ব্যক্তি। এখন তারা নিজেদের পোশাক এমনভাবে বদলে ফেললেন, যাতে কেউ তাদের চিনতে না পারে। কেউ নিজেদের তালেব হিসেবে পরিচয় দিতে চাইছিলেন না। আমি যখন কমান্ডার ছিলাম, তখন আমার বন্ধু আর আত্মীয়স্বজন আমাকে শ্রদ্ধা করত। এখন সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলো। আমার টাকা ছিল না, চাকরি ছিল না। দিনমজুরের কাজ করার জন্য পরিবার নিয়ে পাঞ্জাবের এক গ্রামে পাড়ি জমালাম। কাজ পেলাম না। স্থানীয় ভাষা না জানায় কেউ আমাকে কাজ দেয়নি। পেশোয়ারে ফিরে বাজারে সবজি বিক্রি শুরু করলাম। অর্থ আসতে শুরু হলো। তবে তালেবানের পতন, এত লোকের মৃত্যুর বিষয়গুলো মন থেকে সরাতে পারছিলাম না। স্ত্রী বলল, ঘুমে আমি কাঁদি। ডাক্তারের কাছে গেলাম, তিনি ওষুধ দিলেন। আমি এত উতলা হয়ে পড়েছিলাম যে, কেউ আলু চাইলে তাকে টমেটো দিতাম।  একদিনএকব্যক্তিসবজিকিনতেএলেন। তিনিছিলেনএকজনমোল্লাএবংদীর্ঘদিন উত্তর-আফগানিস্তানেজিহাদকরেছেন। আমরাপরস্পরকে চিনতে পারলাম। তিনিজানতেচাইলেন,আমিআলুবিক্রিকরেযাবোনাকিজিহাদেযোগদেবো?তখনআমারদিনেআয়ছিলদুইহাজাররুপি(৩৩ডলার)। আমারজন্যভালোই। কিন্তুআমিজিহাদেযোগদিতেচাইলাম। আমিএকরাতেপেশোয়ারে এক বৈঠকে যোগ দিলাম। নিজেরচোখকেওবিশ্বাসকরতেপারছিলাম না,সেখানেবসাছিলেনআমারআদর্শপুরুষমোল্লাদাদুল্লাহ। তারনামইআমাদেরকাছেজয়েরমতোমনেহতো। সবজিবিক্রিরআগ্রহপুরোপুরি উবে গেল। কোয়েটায়গিয়েআমারসাবেক৪০০সৈন্যের১৫জনকেখুঁজেপেলাম। তারাআমাকেজড়িয়েধরলএবংজিহাদেফেরতযেতেসানন্দেরাজিহলো। মাঝে মধ্যে ভাবি আমি বুঝি স্বপ্ন দেখছি। আগে ভাবতাম, এখন যা দেখছি তা দেখতে আমার দাড়ি সাদা হয়ে যাবে। কিন্তু আমার দাড়ি এখনো কালো আছে এবং আমরা দিন দিন আরো শক্তিশালী হচ্ছি।
বারি খান
বয়স : ২৭। মসজিদের ইমামের পুত্র। মার্কিন হামলার সময় তার পিতা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এখন গজনি প্রদেশে ১৫ যোদ্ধা নিয়ে লড়াই করছেন।  মুজাহিদদেরপশ্চাৎপসরণের পর আরব,চেচেন,তালেবানসবাইগজনিথেকেপাকিস্তানের দিকে রওনা হলো। কিন্তুসাথেসাথেতারাবোমাহামলারমুখেপড়ল। তাইতারাযানবাহনছেড়েহাঁটতেলাগল। কয়েকজনআঘাতপ্রাপ্ত তালেবান ও আরব তাদের পরিবারসহ আমার পিতার মসজিদে আশ্রয় নিলো। আমাদেরগ্রামবাসী তাদের সহায়তা করেনি। শুধুআমারপিতাআরআমিতাদেরখাবারদিয়েছি।  আমার পিতার মতো মোল্লারা হতাশায় ডুবলেন। তালেবান আমলে তারা ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী। পতনের পর কেউ তাদের দিকে নজর দিত না। আমার পিতা মনোকষ্টে আংশিক পঙ্গু হয়ে গেলেন। ২০০২ সালের শেষ দিকে আফগান পুলিশ আমাদের মসজিদ ঘেরাও করে আব্বাকে সবার সামনে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গেল। তারা তালেবান হিসেবে তাকে চিহ্নিত করে অপমানিত করতে লাগল। তার বয়স তখন ছিল ৭০ বছর। মসজিদে যারা নামাজ পড়ত, তারা পুলিশের জুতা পায়ে মসজিদে প্রবেশে ক্ষুব্ধ হলো। তারা পুলিশের কাছে গিয়ে তাদের পঙ্গু বৃদ্ধ ইমামকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাল। তিনি ২০০৩ সালে ইন্তেকাল করেন। আমি তখনো শিশু। কিন্তু তবু দু’বার গ্রেফতার হলাম। আমাকে মুক্ত করতে আমাদের মোটরবাইকটি বিক্রি করতে হলো। পুলিশ আমার স্কুলশিক ভাইকেও গ্রেফতার করল। পুলিশ এমনকি আমাদের জেলার ৯০ বছর বয়সী মাওলানাকে গ্রেফতার করে অপমানিত করল। সাধারণ মানুষের মনোভাব এতে বদলে গেল। মসজিদ ও মাওলানাদের প্রতি পুলিশ ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের অসৌজন্যমূলক আচরণে তারা ক্ষুব্ধ হলো। ২০০৪ সালের মাঝামাঝি থেকে গজনিতে তালেবান উপস্থিতি ব্যাপক হতে লাগল। ২০০৫ সালের শুরুতে তারা পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা ও গোয়েন্দাদের ওপর হামলা চালাতে লাগল। এক রাতে আব্বার এক ছাত্র তার দুই সহকর্মীকে নিয়ে আমার বাড়িতে এলো। মার্কিন হামলার পর এ-ই প্রথম আমি সশস্ত্র তালেবান দেখলাম। পরদিন ফজরের সময় তাদের নিয়ে মসজিদে গেলাম। তারা একটি তালিকা পড়ল এবং প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও পৌত্তলিকদের দোসরদের নাম প্রকাশ করে তাদের হুঁশিয়ার করে দিলো। জানিয়ে গেল এক সপ্তাহ পরে সে ফিরে আসবে। আমেরিকানদের সাথে যুদ্ধ করা সহজ নয়। ২০০৭ সালের এক রাতে আমেরিকানরা আমাদের কমান্ডার মোল্লা নসরুল্লার বাড়িতে হামলা চালাতে তিনি নিহত হন। এভাবে আমাদের ১২ জন কমান্ডার নিহত হন। সব হামলাই হয়েছে মধ্যরাতে ও ফজরের ওয়াক্তে। আমরা বুঝতে পারলাম, আমাদের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে এবং গোয়েন্দা তথ্যে আমাদের অবস্থান তারা চিহ্নিত করছে। তাই আমরা মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করলাম বিকেল ৬টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত তাদের সব ট্রান্সমিশন বন্ধ রাখতে। আমাদের ওপর এর পরও হেলিকপ্টার ও বোমা হামলা হয়েছে। তবে রাতে হামলা হয়েছে কম। আমার মনে হচ্ছে, তারা আগের মতো আর গোয়েন্দা তথ্য পাচ্ছে না। তাদের সহযোগিতা করা ও আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার মতো লোকের সংখ্যা কমে গেছে। অন্য দিকে আমাদের লোকজন ২৪ ঘণ্টা আমেরিকান ঘাঁটিগুলোও ওপর নজর রাখছে। তারা আমেরিকানদের চলাচল আমাদের জানাচ্ছে। আমরা রাস্তার পাশে বোমা রেখে আমেরিকানদের আঘাত করে হাওয়া হয়ে যাই। এখন আমরা আইইডি বিস্ফোরণের পর একে ও আরপিজি দিয়ে গুলিবর্ষণ করি। আমাদের এখন অনেক বেশি আইইডি আছে। আমরা প্রয়োজনীয় কাঁচামাল নিয়মিত পাচ্ছি। আরবদের কাছে শিখলেও এসব বানানোয় এখন আমরা তাদের চেয়েও দক্ষ । আমেরিকানরাডলারদিয়েতালেবানযোদ্ধাদের জিহাদ থেকে সরানোর কথা বলছে। অদ্ভুতকথা। এক বছরআগেওবিয়েকরতেচেয়েছিলাম। কিন্তুকনেরপিতারদেড়হাজারডলারআরমোহরানাপাঁচশ’ডলারজোগাড়করতেপারিনি। টাকাজোগাড়হলেইবিয়েসেরেফেলব। অবাকহচ্ছেন!ভাবছেন,বিয়েরএকসপ্তাহপরেযেলোকনিহতহবেতারকাছেকেতারমেয়েবাবোনকেবিয়েদেবে?তারাবরংজিহাদেশরিকহতেপেরেখুশিহয়। তালেবানহওয়াসহজনয়। এটাআগুনেরপোশাকপরারমতো। যেকোনোসময়নিহতহতেপারে,এটামাথায়রেখেইবাড়িছাড়তেহয়। আমেরিকানরাতোমাকেআটককরেকুকুরেরখাঁচায়বাগরামবাগুয়ানতানামোয় নিয়ে যেতে পারে। আহতহলেচিকিৎসানা-ও পেতেপারো। তোমারকাছেঅর্থথাকবেনা। কিন্তুতবুওনতুননতুনলোকযোগদিচ্ছেআমাদেরসাথে। আর এতেইআমারঈমানজোরদারহচ্ছে,এইযুদ্ধেআমরাকখনোহারবনা।
কারি ইউনুস
বয়স : ২৭। মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র। এখন তালেবানদের পক্ষে অস্ত্র, অর্থ ও তথ্য সরবরাহ করে থাকেন।

আমি যখন শিশু, তখন আমার পিতা রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে জিহাদে মুজাহিদ কমান্ডার ছিলেন। তিনি নিরাপত্তার জন্য আমাদের পরিবারকে দণি ওয়াজিরিস্তানের ওয়ানায় এক আফগান উদ্বাস্তুশিবিরে রেখে গিয়েছিলেন। তালেবানের জয়ের পর (১৯৯৬ সালে) তিনি কাবুলে কোনো এক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হলেন। তিনি ছুটির দিনগুলোতে ওয়ানায় যেতেন। ইসলামি রাষ্ট্রটির পতন ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। আমি ওয়ানায় আহত, পঙ্গু, পরাজিত তালেবান যোদ্ধাদের দেখতাম। তারা রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষুকের মতো ঘুরত। আস্তে আস্তে উপজাতীয় লোকজন তাদের সহায়তা করতে লাগল। অনেকে এমনকি তাদেরকে বাড়িতেও নিয়ে গেল। তালেবান যোদ্ধারা লড়াই না করায় আরবরা হতাশ ছিল। তারা আমাকে বলত, তারা মৃত্যু পর্যন্ত জিহাদ করতে চেয়েছিল। তারা আফগানদের মতো মর্মপীড়ায় ভুগত না।আরবরা মনে করত, তারা যুদ্ধে হেরে গেছে। কিন্তু আফগানরা ছিল আরো বিপর্যস্ত। তারা তাদের দেশও হারিয়েছিল।

আফগানরা নয়, আরবরাই প্রথমে যুদ্ধে ফিরে যাওয়া শুরু করল। তারাই আশা ছেড়ে না দিতে আফগানদের উদ্বুদ্ধ করেছিল। আরবরা কিছু কিছু প্রশিণ ক্যাম্প বানাতে শুরু করল। তাদের একটি শিবির দেখে আমি মুগ্ধ হলাম। অনেকগুলো ক্যাম্প ছিল। একটি চালাত আরবরা, আরেকটি চেচেন ও উজবেকরা। মাদ্রাসায় পড়াশোনার কারণে আমি আরবি বলতে পারতাম; মিসরীয়, সৌদি, লিবিয়ান, ইয়েমেনিদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হলো। ধীরে ধীরে তাদের সাথে আফগানরা যোগ দিলে শক্তি বাড়তে লাগল।
ইউনুস : আমাদের শিবিরে আফগান, চেচেন ছাড়াও প্রায় ১৫০ জন আরব ছিল। আরব প্রশিকরা আমাদের কালাশনিকভ, মর্টার, রকেট চালানোসহ নানা প্রশিণ দিতেন। ২০০৩ সালের এপ্রিলের এক রাতে অভিযানে বের হলাম। আমাদের টার্গেট ছিল পাকতিয়া প্রদেশের একটি মার্কিন ঘাঁটি। ফজরের সময় আমরা আক্রমণ চালালাম। ভেবেছিলাম তারা অবাক হয়ে যাবে। আমরা প্রায় ৩০ মিনিট ধরে তাদের ওপর ১২২ এমএম রকেট আর মর্টার হামলা করলাম। একটু দূরে থাকায় কালাশনিকভ চালাতে পারিনি। আমেরিকান হেলিকপ্টারগুলো আমাদের ওপর রকেট আর বুলেট বর্ষণ করতে লাগল। আমরা দৌড়ে পালালাম। আমাদের ছয়জন শাহাদতবরণ করল। আমরা আমাদের জেহাদের কথা জানিয়ে দিলাম। শহীদদেরও সাথে করে নিয়ে এলাম ওয়ানায়। হাজার হাজার স্থানীয় লোক তাদের জানাজায় শরিক হলো। এই সংবাদে আশপাশের এলাকা থেকে সাবেক তালেবান সদস্যরা আমাদের সাথে যোগ দিতে শুরু করল। প্রথম দিককার কয়েকটি আক্রমণের পর মনে হলো আল্লাহ আমাদের জন্য অর্থের ভাণ্ডার খুলে দিয়েছেন। আমাকে বলা হলো, কয়েকটি আরব দেশ থেকে অর্থ আসছে।
 কিছু দিন পর আমার ছোট ভাই বিয়ে করল। মা জানতে চাইলেন : ‘বাছা, তুমি কবে বিয়ে করবে?’ বললাম, যে দিন তালেবান বাহিনী কাবুলে ফিরে গিয়ে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে সে দিনই বিয়ে করব। সেই দিনটি হয়তো অনেক দূরে, কিন্তু আমি নিশ্চিত সেই দিনটি আসবে।
মোল্লা আগা মোহাম্মদ
বয়স : ৪৫। ২০০১ সাল পর্যন্ত খণ্ডকালীন তালেবান হিসেবে কাজ করেছেন। এখন তালেবান সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত রয়েছেন তিনি।]  তালেবানের পতন ছিল আমার জিহাদি ক্যারিয়ারের সূচনা। ১৯৯৪ সালে আব্বার ইন্তেকালের পর মা ও ভাইবোনদের দায়িত্ব আমার কাঁধে পড়ে। তাই মোল্লা ওমরের আন্দোলনে যোগ দেয়ার ফুরসত ছিল না আমার। তবে জিহাদে যোগ না দেয়ার মনোকষ্টে ভুগতাম। ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর পেশোয়ারে আমি যে মসজিদে ইমামতি করতাম, অনেক পঙ্গু ও বিধ্বস্ত মুজাহিদ সেখানে আসে। তাদের অনেকের সাথে আমার কথা হতো। এবার আমি জিহাদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আজিজুল্লাহ নামে এক তরুণ আফগানের কাছে গেলাম। প্রথমে ইতস্তত করলেও পরে আমাকে ওয়াজিরিস্তানের এক প্রশিণ শিবিরের ঠিকানা দিলো। ছোট ভাইয়ের হাতে পরিবারের দায়িত্ব দিয়ে দণি ওয়াজিরিস্তানে গেলাম। এক প্রত্যন্ত পার্বত্য মসজিদে এক মোল্লাকে আজিজুল্লাহর পত্র দেয়ার পর তিনি আমাকে আরো প্রত্যন্ত এলাকায় গোপন আস্তানায় নিয়ে গেলেন। কয়েকজন আফগান ও চেচেন যোদ্ধার সাথে ২০ থেকে ৩০ জন সৌদি আরব, ইয়েমেন ও মিসরীয় যোদ্ধা ছিল সেখানে। তাদের নেতা আবু খাবাব আমার সাথে দেখা করলেন। এখানেই অনেক শীর্ষ নেতা মাটির ঘরে বসবাস করেন। স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের খাবার ও অন্যান্য জিনিস সরবরাহ করত। প্রশিণ শিবির ছিল অত্যন্ত কঠিন। পাহাড়ে পাহাড়ে চলত গেরিলা যুদ্ধের প্রশিণ। নিয়মানুবর্তিতা ছিল কঠোর। কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হতো। ফজরের সময় উঠে ব্যায়ামের জন্য পাহাড়ে দৌড়াতে হতো। সার্বণিক প্রস্তুতির জন্য অনেক সময় সারা রাত জেগে থাকতে হতো। নাইট্রেট সার আর ডিজেল মিশিয়ে আইইডি বানানোর কৌশল আরবরাই শিখিয়েছিল। দুই মাস প্রশিণের পর আমরা বিভিন্ন গ্র“পে অভিযানে নেমে পড়লাম।  প্রথম দিকে যেসব গ্র“প সীমান্ত অতিক্রম করেছিল, তাদের নেতৃত্বে ছিল আরবরা। আমেরিকান অভিযানে বিপর্যস্ত গ্রামবাসী, হামলায় নিহত লোকদের আত্মীয়স্বজন, কারজাইয়ের দুর্নীতিবাজ পুলিশের হাতে নিগৃহীত লোকজন তালেবানের পেক্ষ যোগ দিতে লাগল।
আগা মোহাম্মদ : আমরা সময় নিয়ে কখনোই ভাবি না। যত দিনই লাগুক না কেন, আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো। মার্কিনিদের অস্ত্র আছে, কিন্তু আমরা দীর্ঘ আর অকান্ত জিহাদে প্রস্তুত। আমরা এখানে জন্মেছি, এখানেই মারা যাবো। আমরা কোথাও যাবো না।
মুফতি মসিহউদ্দিন
বয়স : ৩১। ছাত্র ও যোদ্ধা। খণ্ডকালীন তালেবান হিসেবে ২০০১ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন। এখন নুরিস্থান প্রদেশে ২ শ’ তালেবান যোদ্ধা নিয়ে কাজ করছেন।
মসিহউদ্দিন : তালেবানের পতনের সময় আমি ছিলাম নুরিস্তানের এক মাদ্রাসার ছাত্র। সব তালেবান কর্মকর্তা ও যোদ্ধা পালিয়ে যাওয়ায়, আমি পাকিস্তানে আমার লেখাপড়া চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। (তদানিন্তন পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট পারভেজ) মোশাররফ (২০০২ সালে) নতুন আইন করে পাকিস্তানি মাদ্রাসাগুলোতে বিদেশী ছাত্রদের পড়াশোনা নিষিদ্ধ করলেন। তাই আমি পেশোয়ারের কাছে একটা মসজিদে গেলাম পড়াশোনা করতে। আমরা ছিলাম ১০ জন ছাত্র এবং সবাই একটি ছোট কে ঘুমাতাম। লোকজন আমাদের খাবারও দিত না। তাই অনেক রাত কাটত অনাহারে। বিদ্যুৎ ছিল না। মাঝে মধ্যে পুলিশ হানা দিয়ে আমাদের ধরে নিয়ে যেত, নানাভাবে উৎপাত করত। আমরা পলাতক তালেবানের রা কামনা করে দোয়া করতে শুরু করলাম।
মসিহউদ্দিন : বার্জ মাতাল পর্বতশীর্ষে অবস্থানের সময় আমেরিকানরা আমাদের ফোনকল আর ওয়াকিগুলো মনিটর করছিল। তারা আফগান গোয়েন্দাদের দিয়ে আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছিল। তাই আমরা আক্রমণের সতর্ক পরিকল্পনা করলাম। আমাদের একজন বলল, আমেরিকানরা যদি শুধু পাথরও ছোড়ে, তবুও আমরা ভয়ানক বিপদে পড়ব। কারণ আমরা খাড়া পর্বতে আক্রমণ করতে যাচ্ছি। আমরা তার দিকে চেয়ে হাসলাম। তবে জানতাম, তার কথায় কিছু সত্যতা আছে। আমি কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী চাইলাম এবং দেখলাম সবাই প্রস্তুত। হতাহতদের ফিরিয়ে আনার জন্য গাধা ও স্ট্রেচারসহ মেডিক্যাল দল গঠন করলাম। অস্ত্র, গোলাবারুদ বণ্টন করে দিতেই প্রবল বেগে বৃষ্টি নামল। আমেরিকানরা ভারী বুট আর অন্যান্য আধুনিক সরঞ্জামে সমৃদ্ধ ছিল। তাই তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। আমাদের লোকদের বেশির ভাগের পায়ে ছিল চামড়ার স্যান্ডেল। তাই তাদের চলাফেরা হচ্ছিল কঠিন। তাই হামলা দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত রাখলাম।
শুক্রবার আসরের নামাজের পর আমরা অভিযানে নেমে পড়লাম। আমাদের লোকজন ধীরে ধীরে চলতে লাগল। আমরা উষ্ণতা পেতে বা রান্না করতেও আগুন জ্বালাইনি। জানতাম, আমাদের সামান্য শব্দও আমেরিকানরা শুনতে পাবে। সূর্যোদয়ের সামান্য আগে হামলার সঙ্কেত দিলাম। মর্টার আর রকেট বর্ষিত হতে লাগল পাহাড়ের চূড়ায়। আমরা কয়েকজন আফগান সৈন্য ও একজন মার্কিন সৈন্যকে হত্যা করলাম। যুদ্ধের সময় আমাদের ভিডিও টিমের কাজ সারতে লাগলাম। আমাদের হামলায় তাদের ঘাঁটিটি আর ব্যবহার উপযোগী থাকল না (তিন দিন পর সেখান থেকে তারা সরে গেল)। তখনো আমাদের কেউ নিহত হয়নি। তারপর আমেরিকান হেলিকপ্টার এসে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু করল। আমাদের ১২ জন শহীদ হলো। আমরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত লড়াই করলাম। তাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সামনে আমাদের বলতে গেলে কিছুই ছিল না। কিন্তু আমরা জানতাম, কী করে পাথর আর পর্বতের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে হয়।
মসিহউদ্দিন : দক্ষিনে মুজাহিদরা আংশিক প্রত্যাহার করে সাধারণত আইইডি ব্যবহার করে হামলা করে সরে যাওয়ার কৌশল গ্রহণ করে ওবামাকে মোকাবেলা করছে। কিন্তু আমরা কুনার আর নুরিস্তানের মুজাহিদরা ভাগ্যবান। এখানকার পর্বত আর বন আমাদের রা করছে। সর্বত্র গাছপালা আর পাথর আমাদের আশ্রয় দিচ্ছে। আমেরিকানরা এখানে আমাদের সাথে পেরে উঠছে না। দুই-তিন বছর আগে এ অঞ্চলে আমেরিকানরা ছুটি কাটানোর মতো করে অবস্থান করত। তারা নিজেদের ভিডিও ও ছবি তুলত আর আনন্দে পর্বতগুলোতে হাঁটত। তারা খোলা জায়গায় খেলত। সেই দিন শেষ। এখন তারা দিনের ২৪ ঘণ্টাই ট্রিগারে আঙুল দিয়ে রাখতে 

1 comment:

  1. আল্লাহ এই বাংলায়ও জিহাদের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিন।আমিন

    ReplyDelete

 
back to top