মুসলমানদের রেওয়াজ অনুযায়ী
তারাবী নামায দিয়েই শুরু হবে রোযা। কিন্তু সেই তারাবীর কথাই যে হাদিসের কিতাবে
উত্তম বেদাত হিসাবে উল্লেখ আছে। এটাই যে আমাকে ভাবিয়ে তুলে জেনে শুনেও কি এই বেদাত
করবো? বেদাত
কাজে কি আমার সোয়াব মিলবে? বেদাত
কাজ করলে যে সোয়াব হয় না সেটাই তো যেনে এসেছি এই যাবৎ। সোয়াবের আশায় ইবাদত করি সে
ইবাদত করতে হাদিস প্রনেতাদের কথা মানবো নাকি এই হাদিস গ্রন্থ পড়ে পড়ে যারা আমাদের
সামনে দাড়িয়ে বিনিময় গ্রহন করে নামায পড়ান তাদের কথা মানবো। বিশ্বাস (ঈমান) যে
ডগমগিয়ে যায়। মনস্থির করে নামায আদায় করতে না পারলে তো প্রতিটি সেজদাই বিফলে যাবে।
পাপের বোঝা তো বাড়বে। এদিকে বিজ্ঞ আলেম সাহেবগন মন মত জ্ঞান বিতরন করে যাচ্ছেন।
অধিকাংশরাই কোরআন ছেড়ে দিয়ে হাদিস ধরেছেন অনেক আগেই। এখন সিহাহ সিত্তাহ হাদিস ছেড়ে
দিয়ে বড় বড় পন্ডিত বিদ্যানদের কথা নিয়েই দৌড়ানো শুরু করেছেন। কোরআন ছেড়ে হাদিস
ধরাতেই বিভ্রান্ততার শেষ নাই। কারণ এক আলেম এক হাদিস বললে অন্য আলেম সাহেব বলেন
এটা জাল ভেজাল। আর ২০০০ সাল পর্যন্ত তো কোন জাল হাদিসের কথা শুনতে পাই নাই। এখন
একদল ধর্ম ব্যবসায়ী জাল হাদিস নাম দিয়ে কিতাব বের করেছেন। বর্তমানে হাদিসের কিতাব
আস্তে আস্তে বিজ্ঞ আলেমদের কিতাবের এত নিচে পরে যাচ্ছে সেটা উঠিয়ে দেখার সময় নাই।
আমার মত ধর্মভীরু আল্লা রাছুল সা. আদেশ নিষেধ মেনেই শেষ করতে পারি না। বাকী বিজ্ঞ
আলেমদের কথা কখন শুনবো? কোরআনের
পর যেহেতু আমাদের দেশের মানুষ সহিহ বুখারী শরীফকে মর্যাদা দেন তাই আমি তারাবী
সম্পর্কে কিছু হাদিস তুলে ধরার ইচ্ছে নিয়েই আমার এই লেখার চেষ্টা করছি; আপনারা নিজ জ্ঞানে বিচার করে দেখবেন। তবে একটা জিনিষ আমি প্রথমেই
বলতে চাই যার নিজেস্ব বিবেক নাই তার জন্য ধর্ম নয়। তারাবী আরবী শব্দটির ইংরেজি
শব্দ দেখা যায়, সেটা
হচ্ছে Rest/Relax (রেষ্ট/রিলাক্স)
এর বাংলা আপনাদের সকলেরই জানা আরাম বা বিশ্রাম। আরাম বা বিশ্রাম কিভাবে হবে সেটা
আপনাদেরকে বুঝানোর দরকার নাই। তবে ভরপেট ইফতার করে গিয়ে ২৯ রাকাত নামাযে কোন
আরামটা কে পান? এটাতে
কি আরাম আমি তা বুঝি না! অবশ্য কেউ কেউ ভাবতে পারে মাটি কাটলে আরাম পায়, সে ক্ষেত্রে বলার কিছু নাই। কেউ যদি মনে করে ইফতারীর সময় খাওয়ার সাথে
যে যুদ্ধটা করা হয় তারাবী (আরাম) নামায পড়লে হজম হয়। সেটাতে ঔষধের টাকা বাচে তবে
তো সত্যিই আরাম। তাহলে আমার অনুরোধ ২০ কেন ৪০ রাকাত পড়ুন।
আর একটি কথা না বললেই নয়।
প্রফেসর কাজী ইব্রাহিম নামক মহাবিজ্ঞ পন্ডিত মানুষকে বুঝাতে চান। কোয়ানটিটি দিয়ে
কোয়ালিটি পুরা করা। পরিমান দিয়ে গুনগতমান পূর্ণ করা। যেমন আপনি আমাকে পাচঁ কেজি
ভাল খেজুর দিলেন আর আমি আপনাকে ৫০০ কেজি ছাই অথবা বালু দিলাম। বিজ্ঞ পন্ডিত বুঝাতে
চান এবং টিভিতে প্রচার করেন নবীজির ৪ রাকাত নামাজের গুনগত মানটা দেখেন না শুধু
পরিমানটাই দেখেন? তা দিয়ে তারা প্রমান করতে
চান নবীর ৪ রাকাতই আমাদের জন্য ২০ রাকাত। কত বড় নাদান নবীজির ৪ রাকাত নামায যে
ধর্ম ব্যবসায়ীদের ৪০০ রাকাতের চেয়েও অধিক উত্তম এটা মাথায় ঢুকে না। আমি জিজ্ঞাসা
করতে চাই আপনি যে টিভিতে বা ওয়াজ মাহফিলে বসে এই আলোচনা শেষে টাকা নিয়ে ঘরে ফিরেন
আমাদের নবী কোথাও টাকা গ্রহন করেছেন ইসলামের দাওয়াতের বিনিময়ে? আল্লা তো নিষেধ করেছেন বিনিময় গ্রহন করতে আশ শুরার আয়াত ৪২:২৩# “হে নবী বলুন, আমি আমার দাওয়াতের বিনিময়ে
আত্মীয়ের ভালবাসা ব্যতীত কোন বিনিময় গ্রহন করবো না।” ৩৬:২১#“অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।” ২:১৭৪#“নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন
করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল
করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন
তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।”এই আয়াতগুলি কি আপনারা দেখেন না? কোন হাফেজ টাকার বিনিময় ছাড়া নামাযের জামাত পড়ান কি? মুসুল্লিগন এই আয়াত না জানলেও এই আয়াতগুলি কি হুজুররা জানেন। তারা কোন সময় বয়ান করেন কি? নামাযে বা ওয়াজ মাহফিলে? কাজেই পাঠকগন চিন্তা করবেন। কারণ অধিকাংশ মানুষই তো বেহেস্তের লোভী এবং জাহান্নামের ভয়ে ইবাদতদ করে। হিতাহিত জ্ঞান কাজে লাগায় না।
ইসলামের দাওয়াতের বিনিময় গ্রহন
করা তো নবী সা. এর উপর নিষেধ সেটা আপনাদের জন্য বৈধ কিভাবে হলো? যে কাজ রাছুল সা. করেন নাই সেটা করা কি বেদাত নয়?
এখানে আমি কোন মন গড়া কথা বলছি
না হাদিস তুলে ধরবো আমাকে নামাজ বিরোধী মনে করবেন তাদের ঈমানই বরং দুর্বল হবে।
বুখারী হাদিস নং-১৮৭০#‘নবীপত্নী আয়েশা রা. হইতে বর্ণিত। হুজুর সা. একদা রমজানের রাত্রের
মধ্য ভাগে বাহির
হইয়া মসজিদে নামায পড়িলেন এবং লোকগনও তাঁহার পিছনে নামায পড়িল। পরে ভোর হইলে লোক
জন ইহার আলোচনা করিল। দ্বিতীয় দিন নবীজি মসজিদে নামায পড়িলে তিঁনার পিছনে অধিক
মানুষ জামাতে শরিক হইল। তৃতীয় রাত্রিতেও রাছুল সা. নামায দাড়াইলে আরোও অধিক মানুষে
জামাতে নামায পড়িল। তারপর চতুর্থ রাত্রে এত লোক হইল যে মসজিদে তাহার যায়গা হইল না।
রাছুল সা. ফজরের নামায পড়তে আসিলেন তাঁহার নামায শেষে হইলে লোকগন নবী সা. এর দিকে
ফিরিয়া দাঁড়াইলেন। তিঁনি খুতবা পড়িলেন। তারপর বলিলেন, তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে আমার নিকট কিছুই গোপন নাই। তবে আমি ভয়
করিতেছি তোমাদের উপর ইহা (তারাবী) ফরয হইয়া যায় নাকি! আর তোমরা তাহা আদায় করিতে
অক্ষম হইয়া পড়িবে। অত:পর নবী সা. ওফাত পর্যন্ত এই বিষয়টি এই অবস্থায়ই রহিয়া গেল।’ এই হাদিসটি থেকে বুঝা যায় রাছুল
সা. মধ্যরাত্রে বের হয়ে মাত্র তিনদিন নামায পড়েছেন। মধ্য রাত্র বলতে এশার নামায এর
সাথে তারাবী আমি বুঝতে বা মানতে পারি না। মধ্য রাত্রে তাহাজ্জুদ বলেই ধরে নেওয়া
যায়। আর তাহাজ্জুদের নফল নামাযেই সবচেয়ে উত্তম ইবাদত আল্লাহকে পাওয়ার।
রাছুল সা. এর ওফাতের পর প্রথম
খলিফার সময়ও তারাবীর কোন নীতিমালা হয় নাই নতুন ভাবে। কিন্তু ২য় খলিফার তাগিত অনুভব
করলেন এবং এটা নতুন করে চালু করলেন। সেটা পাওয়া যায় বুখারী শরীফের হাদিস থেকে। আমি
আপনাদের পড়ে দেখা এবং চিন্তা করার জন্য তুলে ধরছি। হাদিস
নং-১৮৬৯ # ‘আবু
হোরায়রা রা. হইতে বর্ণিত। হুজুর সা. বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রাত্রে ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় নামাযে
দাঁড়াবে তাহার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করিয়া দেওয়া হয়। ইবনে শেহাব বলেন, অত:পর হুজুর সা. ওফাত করিলেন এবং হুকুম এই অবস্থায়ই রহিয়া গেল। তারপর
১ম খলিফার খেলাফত আমল এবং ২য় খলিফার আমলের প্রথম ভাগ এই অবস্থায়ই কাটিয়া গেল।
সকলেই ইচ্ছামতই তারাবী পড়িত।
ইবনে
শেহাব ওরওয়াহ ইবনে জোবায়ের হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। আবদুর রহমান ইবনে আবদুল কারী
বলিয়াছেন, আমি
রমজানের একরাত্রে ওমর ইবনে খাত্তাবের সাথে মসজিদের দিকে বাহির হইলাম। দেখিলাম, বিভিন্ন অবস্থায় বহু লোক, কেহ একা একা নামায পড়িতেছে, কোথাও বা এক ব্যক্তি পড়িতেছে আর কিছু লোকও তাহার সাথে জামাত পড়িতেছে।
তখন ওমর রা. বলিলেন, আমার
মনে হয় ইহাদের সকলকে একজন কারীর সঙ্গে জামাতভূক্ত করিয়া দিলে সর্বাপেক্ষা ভালো
হইবে। অত:পর তিনি তাহাই করার মনস্থ করিলেন এবং তাহাদিগকে উবাই ইবনে কা’ব রা. এর পিছনে জামাতভূক্ত করিয়া দিলেন। ইহার পর আমি দ্বিতীয় রাত্রে
আবার তাহার (ওমর) সহিত নামাযে বাহির হইলাম। দেখিলাম, লোকগন তাহাদের ইমামের সহিত নামায পড়িতেছে। ওমর রা. বলিলেন, ইহা উত্তম বেদয়াত।’
উপরোক্ত হাদিসটি পড়লে স্পষ্টই
বুঝা যাচ্ছে খলিফা ওমর এবং আবদুর রহমান ছাড়াই জামাতে নামায আদায় হচ্ছে আর তারা
দেখছেন। হাদিসে উল্লেখিত উত্তম বেদায়াতে তাড়া সামিল হন নাই। খলিফা ওমর দেখেছেন
জামাতে নামায আদায় করা। এই তারাবীকে যারা সুন্নত বলছেন কেউ কেউ ওয়াজিবও
বানাতে চেষ্টা করছেন। আমরা অধিকাংশই জানি ‘ওয়াজিব’ আল্রার
পক্ষ থেকে আর সুন্নত রাছুল সা. এর পক্ষথেকে যেটা এসেছে। এখানে আমার একটা প্রশ্ন
মনে আসে প্রথম খলিফার খেলাফত কালে এটা কিভাবে বাদ পরলো? মানুষ নিজস্ব চিন্তা চেতনা বাদ দিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীদের পিছনে দৌড়ানোর
কারণেই সত্য থেকে দুরে থাকে। কারণ ইবাদত সবই যে করে মানুষ সওয়াবের লোভে
কর্তব্য বোধ থেকে নয়।
এবার আসা যাক তারাবী নামায কত
রাকাত কেউ যদি হাদিস শরীফ থেকে বের হয়ে বেশী আদায় করেতে চায় নামায অসুবিধা নাই।
যেহেতু রাত্রিকালীন নামাযটা নফল হিসাবেই গন্য তাতে নফলের নিয়তে ২০ কেন ৪০ রাকাত
পড়লেও দোষের কিছু নাই। যেহেতু সওয়াব এর সাথে সম্পর্ক। ‘রাত্রিকালীন নামায রমজান এবং
রমজান ব্যতীত ৮ হইতে ১১ রাকাতের অধিক রাছুল সা. আদায় করেন নাই’। এটা বুখারী শরীফের একাধিক হাদিসে
রাছুল সা. এর প্রিয় স্ত্রী আয়েশা রা. রেওয়ায়েত করা হাদিসেই আছে যেমন বুখারী হাদিস-
১০৫২, ১০৭৬, ৩৩০৮ নাম্বারগুলি দেখলেই পাবেন। আর আয়েশা রা. হাদিস থেকে যদি কোন
কিছুকে বেশী মানা হয় সেটাও তো বেদাতেরই সামিল বলেই মনে করি।
আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন ৯৪:৭-৮#‘‘অতএব যখনই আপনি অবসর পাবেন তখনই নফল ইবাদত করবেন’ এবং নফল ইবাদতের মধ্যেই আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়।’’ তাহলে ৮ থেকে ২০ নিয়ে দ্বিমত না
করে যার যার সাধ্য অনুযায়ী নফল নামায আদায় করুন। সম্ভব হলে ১০০ রাকাত করে পড়ুন
প্রতিদিন সোয়াবের জন্য। কাজেই চিন্তা করে দেখবেন তারাবী সম্পর্কে তারাবী আকারে
পড়বেন নাকি নফল হিসাবে পড়ে সঠিক সওয়াবের অধিকারী হবেন। হাদিসে উল্লেখ আছে “প্রত্যেক বেদাতই গোমরাহী”। গোমরাহীতা মানুষকে বিপথগামী করে অন্তত্য ইবাদতের দিক থেকে।
No comments:
Post a Comment