Sunday, 26 April 2015

আলে সৌধ বা বর্তমান সৌদি আরবের রাজাদের গল্প

0 Comments
৮ ই শাওয়াল (শুক্রবার) ইসলামের ইতিহাসের এক শোকাবহ দিন। ৮৮ বছর আগে এই দিনে ওয়াহাবি ধর্মদ্রোহীরা পবিত্র মক্কা ও মদিনায় ক্ষমার অযোগ্য কিছু পাপাচার ও বর্বরতায় লিপ্ত হয়েছিল। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যখন পবিত্র জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র দ্বিতীয়চতুর্থপঞ্চম ও ষষ্ঠ নিষ্পাপ উত্তরসূরির পবিত্র মাজার জিয়ারত করছিলেন তখন ওয়াহাবি দুর্বৃত্তরা সেখানে ভাঙ্গচুর ও লুটপাট অভিযান চালায় এবং ওই নিষ্পাপ ইমামদের পবিত্র মাজারের সুদৃশ্য স্থাপনা ও গম্বুজগুলো মাটির সঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।

এরপর বর্বর ও ধর্মান্ধ ওয়াহাবিরা আরো কিছু পবিত্র মাজারের অবমাননা করে এবং এইসব মাজারের গম্বুজ ও  স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে-চুরে ইসলাম অবমাননার ন্যক্কারজনক তাণ্ডব চালায়। এইসব মাজার ছিল বিশ্বনবী (সা.)'র  ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন,সাহাবি,স্ত্রীবংশধর ও খ্যাতনামা আলেমদের।
জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে এসে বিশ্বনবী (সা.) বলতেন তোমাদের ওপর সালাম! হে বিশ্বাসীদের আবাসস্থল! আল্লাহ চাইলে আমরাও শিগগিরই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব। হে আল্লাহআল-বাকির (জান্নাতুল বাকি কবরস্থানের) অধিবাসীদের ক্ষমা করুন।

সুন্নি ও শিয়া সূত্রে বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী বিশ্বনবী  হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর সাহাবায়ে কেরাম ও আত্মীয়-স্বজনদের কবরে সালাম দিতেন।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) গোটা সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত (রাহমাতুললিল আলামিন) হিসেবে তাঁর যুগের  ও অন্য সব অনাগত যুগের মুসলমানদের জন্য সত বা মহত লোকদের কবর জিয়ারতের ব্যাপারে নিজের সুন্নাত ও কর্মপন্থা শিখিয়ে গেছেন।

মহান আল্লাহর ইচ্ছায় নেককার কবরবাসী সালাম ও দোয়া শুনতে পান। বিশ্বনবী (সা.) নিশ্চয়ই জানতেন যেমুসলমান নামধারী এক শ্রেণীর মানুষ সুদূর ভবিষ্যতে তাঁর এইসব সুন্নাত পদদলিত করবে এবং মক্কা ও  মদিনায় মুসলমানদের রক্ত ঝরাবে এবং বেদাআত বা কুপ্রথা প্রতিরোধের নামে তাঁর পবিত্র আহলে বাইত বা নিষ্পাপ ইমামদের পবিত্র মাজারগুলোসহ  তাঁর  ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনস্ত্রীসাহাবি,  বংশধর ও খ্যাতনামা আলেমদের মাজারগুলো গুড়িয়ে দেবে।

বিশ্বনবী (সা.) কবর জিয়ারতের সুন্নাতকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করেছিলেন। সম্ভবত এর অন্যতম কারণ এটাও ছিল যে এর মাধ্যমে তিনি মুসলমানদের মধ্যে বিভেদকামী এই ওয়াহাবি-সালাফি গোষ্ঠীর মুনাফেকি বা কপট চরিত্র উন্মোচন করবেন। এই সুন্নাতের মাধ্যমে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এটা স্পষ্ট করেন যেএকটি গতিশীল ইসলামী সমাজ সবসময় তার মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ করে যেই মৃত ব্যক্তিরা মৃত্যুর পরেও খোদায়ী রহমত পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। অন্যদিকে শহীদদের অবস্থা আরো উন্নত। স্বয়ং মহান আল্লাহ বলেছেন,
 যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদের তোমরা মৃত ভেবো নাবরং তারা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে জীবিকা-প্রাপ্ত। (সুরা আলে ইমরান-১৬৯)
অন্য একটি আয়াত হতে জানা যায় এই বিশেষ জীবন (বারজাখের জীবন) শুধু শহীদদের জন্যই নয়বরং আল্লাহর সকল অনুগত ও সৎকর্মশীল বান্দার জন্য নির্ধারিত।
মহান আল্লাহ্ বলেছেন :
 যারা আল্লাহ্ ও তাঁর প্রেরিত পুরুষের আনুগত্য করবে তারা সেই সব ব্যক্তির সঙ্গে থাকবে নবীগণসত্যবাদিগণশহীদগণ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য হতে যাদের তিনি নিয়ামত দিয়েছেন। তারা কতই না উত্তম সঙ্গী! (সুরা নিসা-৬৯)
যদি শহীদগণ আল্লাহর কাছে জীবিত থাকেন ও জীবিকা লাভ করেন তবে যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হবেসেও শহীদদের সাথে থাকবে, (যেহেতু রাসূল নিজেও তাঁর আনীত নির্দেশের আনুগত্যকারীসেহেতু তিনিও এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত)। কারণ এ আয়াতে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যকারীরা শহীদদের সঙ্গে থাকবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদি শহীদরা মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে জীবিত থাকেন তবে তারাও অর্থাত আল্লাহ ও নবী-রাসূলদের আনুগত্যকারীরাও আল্লাহর কাছে জীবিত রয়েছেন ও বারজাখী জীবনের অধিকারী।

বিশ্বনবী (সা.)র জন্য এটা কতই না হৃদয় বিদারক যে তাঁর প্রিয় আহলে বাইতসাহাবি ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের মাজারগুলো গুড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে! জান্নাতুল বাকি কোনো সাধারণ কবরস্থান নয়। এখানে রয়েছে অন্তত সাত হাজার সাহাবির কবর। এখানে রয়েছে বিশ্বনবী (সা.)র ফুপি বা পিতার বোন হযরত সাফিয়া ও আতিকার কবর। এখানেই রয়েছে বিশ্বনবী (সা.)র শিশু পুত্র হযরত ইব্রাহিম (তাঁর ওপর অশেষ শান্তি বর্ষিত হোক)-এর কবর। এই পুত্রের মৃত্যুর সময় বিশ্বনবী (সা.) অশ্রু-সজল চোখে বলেছিলেনচোখগুলো থেকে পানি ঝরছে এবং হৃদয় শোকাহতকিন্তু আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্রেককারী কথা ছাড়া অন্য কিছুই বলব না। আমরা তোমার জন্য শোকাহত হে ইব্রাহিম!

জান্নাতুল বাকি হচ্ছে সে স্থান যেখানে সমাহিত হয়েছেন বিশ্বনবী (সা.)র চাচা হযরত আবু তালিব (রা.)র স্ত্রী ফাতিমা বিনতে আসাদ (সালামুল্লাহি আলাইহা)। এই মহীয়সী নারী বিশ্বনবী (সা.)-কে লালন করেছিলেন নিজ সন্তানের মত স্নেহ দিয়ে এবং তাঁকে কবরে রাখার আগে বিশ্বনবী (সা.) এই মহান নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য নিজেই ওই কবরে কিছুক্ষণ শুয়েছিলেন। রাসূল (সা.) তার জন্য তালকিন উচ্চারণ করেছিলেন শোকার্ত কণ্ঠে।  

জান্নাতুল বাকি হচ্ছে সেই কবরস্থান যেখানে বেহেশতী নারীদের সর্দার তথা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা (সা.) বিশ্বনবী (সা.)র ইন্তিকালের পর যে ৯০ দিন নিজে বেঁচে ছিলেন প্রায়ই সেখানে গিয়েই শোক প্রকাশ করতেন। যেখানে বসে তিনি শোক প্রকাশ করতেন সেই স্থানটিকে বল হল বাইতুল হুজন বা শোক প্রকাশের ঘর। একই স্থানে কারবালার শোকাবহ ঘটনার পর  বিশ্বনবী (সা.)র নাতি শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইন (আ.) ও নিজের পুত্র হযরত আবুল ফজল আব্বাস (রা.) র জন্য শোক প্রকাশ করতেন মুমিনদের নেতা হযরত আলী (আ.)র স্ত্রী উম্মুল বানিন (সা. আ.)। এখানেই মদিনাবাসী যোগ দিতেন শোক-অনুষ্ঠানে। এখানে প্রায়ই শোক প্রকাশের জন্য আসতেন ইমাম হুসাইন (আ.)র স্ত্রী হযরত রাবাব (সা. আ.)। বিশ্বনবী (সা.)র নাতনী ও ইমাম হুসাইন (আ.)র বোন হযরত জয়নাব (সা. আ.) ও উম্মে কুলসুম (সা.আ.) নিয়মিত শোক প্রকাশের জন্য এখানেই আসতেন।

৮৮ বছর আগেও জান্নাতুল বাকিতে টিকে ছিল বিশ্বনবী (সা.)র ১২ জন নিষ্পাপ উত্তরসূরির মধ্য থেকে তাঁর নাতি হযরত ইমাম হাসান (আ.)অন্য নাতি ইমাম হুসাইন (আ.)'র পুত্র ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.)তাঁর পুত্র ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.) ও বাকির (আ.)'র পুত্র ইমাম জাফর সাদিক (আ.)র সুদৃশ্য মাজার। কিন্তু বর্তমানে এ এলাকায় টিকে রয়েছে একমাত্র বিশ্বনবী (সা.)র মাজার। ওয়াহাবিরা বিশ্বনবী (সা.)র পবিত্র মাজার ভাঙ্গার জন্য বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়ার পরও মুসলমানদের প্রতিরোধের মুখে ও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার ভয়েই তা বাস্তবায়নের সাহস করেনি।

ব্রিটিশ ও কাফিরদের সহযোগী ইহুদিবাদী চরিত্রের অধিকারী ওয়াহাবিরা কেবল মদিনায় নয় পবিত্র মক্কায়ও ইসলামের অনেক নিদর্শন ও পবিত্র মাজার ধ্বংস করেছে। এইসব মাজারের মধ্যে রয়েছে মক্কায় জান্নাতুল মোয়াল্লা নামক কবরস্থানে অবস্থিত বিশ্বনবী (সা.)র স্ত্রী ও  প্রথম মুসলমান  উম্মুল মুমিনিন হযরত খাদিজা (সা. আ.)র পবিত্র মাজার এবং বিশ্বনবী (সা.)  পুত্র হজরত কাসেম (আ.)চাচা হযরত আবু তালিব (রা.) ও দাদা হযরত আবদুল মুত্তালিব (আ.)সহ অন্যান্য পারিবারিক সদস্যদের মাজার।

ওয়াহাবিরা মদীনায় ওহুদ যুদ্ধের ঐতিহাসিক ময়দানে বিশ্বনবী (সা.)র চাচা শহীদদের নেতা হযরত হামজা (সা.)র মাজারসহ অন্যান্য শহীদ সাহাবিদের মাজারও ধ্বংস করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াহাবিরা সিরিয়ায় বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত সাহাবির মাজারে হামলা চালিয়ে সেইসব মাজারের অবমাননা করেছে। তারা বিখ্যাত সাহাবি হজর ইবনে ওদাই (রা.) মাজার ধ্বংস করে তার লাশ চুরি করে নিয়ে গেছে। এ ছাড়াও তারা কয়েকবার হামলা করেছে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)র বোন হযরত জয়নাব (সা. আ.)র মাজারে।

ওয়াহাবিরা এভাবে ইসলামের ইতিহাসের নিদর্শনগুলো ধ্বংস করছে ঠিক যেভাবে বায়তুল মোকাদ্দাস শহরে মুসলমানদের পবিত্র প্রথম কেবলা এবং এর আশপাশের  ইসলামী নিদর্শনগুলো ধ্বংসের চেষ্টা করছে দখলদার ইহুদিবাদীরা। ফিলিস্তিনের অনেক ইসলামী নিদর্শন ধ্বংস করেছে ইহুদিবাদীরা। অনেকেই মনে করেন ওয়াহাবিদের পৃষ্ঠপোষক সৌদি রাজবংশ (যারা তুর্কি খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ইংরেজদের সহায়তা করেছে এবং পুরস্কার হিসেবে হিজাজে বংশীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে) ছিল একটি ইহুদিবাদী ইহুদি গোত্রেরই বংশধর। এরা মুখে মুখে মুসলমান বলে দাবি করলেও সব সময়ই ইসলামের শত্রুদের সহযোগী।

কেউ কেউ বলে থাকেন যে সৌদি রাজ-পরিবার আসলে দোমনেহ নামের বিভ্রান্ত ইহুদিবাদী গোষ্ঠীর বংশধর। এই গোষ্ঠী ভণ্ড  ইহুদিবাদী নবী শাব্বিটি জিভির অনুসারী। তারা প্রকাশ্যে ইসলামের অনুসারী বলে দাবি করত। কিন্তু তারা বাস্তবেমদ্যপ ও নির্বিচার যৌনাচার বা যৌন অনাচারসহ নানা ঘৃণ্য কাজে অভ্যস্ত ছিল।

আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে ওয়াহাবি মতবাদের প্রবক্তা আবদুল ওয়াহহাব নজদি সৌদ বংশের সহায়তা নিয়ে ইবনে তাইমিয়ার বিভ্রান্ত চিন্তাধারা প্রচার করতে থাকে। তার ভুল দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নজদি অলি-আওলিয়ার উসিলা দিয়ে দোয়া করা,তাদের মাজারে মানত করা ও শ্রদ্ধা জানানোসহ অলি-আওলিয়ার মাজার ও কবর জিয়ারতের মত ইসলামের মৌলিক কিছু ইবাদত এবং আচার-অনুষ্ঠানকে হারাম ও শির্ক বলে ঘোষণা করেছিল।  ফলে ওয়াহাবিরা মাজার ও পবিত্র স্থানগুলো ধ্বংস করে আসছে। শুধু তাই নয় নজদি তার চিন্তাধারার বিরোধীদেরকে কাফির ও তাদেরকে হত্যা করা ওয়াজিব বলে উল্লেখ করত।

অথচ বিশ্বনবী (সা.) নিজে কবর জিয়ারত করতেন এবং বিশেষ করে তাঁর মাতা হযরত আমিনা (সালামুল্লাহি আলাইহা)র কবর জিয়ারত করতে ছুটে যেতেন। তিনি নিজের মায়ের কবরের পাশে কাঁদতেন। (আল মুস্তাদরাকখণ্ড-১পৃ.৩৫৭মদিনার ইতিহাস,ইবনে শাব্বাহখণ্ড-১পৃ.১১৮) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত হয়েছে যেমহানবী (সা.) বলেছেনতোমরা কবর জিয়ারত কর। এই জিয়ারত তোমাদেরকে পরকালের স্মরণে মগ্ন করবে।


ওয়াহাবিরা আলে সৌদের বাহিনী নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের ওপর নৃশংসভাবে গণহত্যা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করত এবং জনগণকে ওয়াহাবি মতবাদ মেনে নিতে বাধ্য করত। প্রাথমিক পর্যায়ে যখন তাদের কেন্দ্রীয় শাসন ছিল না সে সময় ওয়াহাবিরা লুটপাট ও ডাকাতির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। শহরগুলোতে লুটপাটের পর সেইসব অঞ্চলের ওপর দখলদারিত্ব ধরে রাখার ক্ষমতা তখনও তাদের ছিল না। ওয়াহাবিরা বিশ্বনবী (সা.)র পবিত্র মাজারে এবং কারবালায় হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) মাজারে হামলা চালিয়ে মূল্যবান অনেক সম্পদউপহার ও নিদর্শন লুট করেছিল।

ইসলামের পবিত্র ও ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো ধ্বংস করে ওয়াহাবিরা শুধু মুসলিম উম্মাহর হৃদয়কেই ক্ষত-বিক্ষত করেনি,একইসঙ্গে মানব সভ্যতার অবমাননার মত জঘন্য কলঙ্কও সৃষ্টি করেছে। কারণপ্রত্যেক জাতি ও সভ্যতাই নিজের পুরনো ঐতিহাসিক চিহ্ন ও নিদর্শনগুলোকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সংরক্ষণ করে। এ জন্য বিপুল অংকের অর্থ খরচ করে থাকে জাতিগুলো। অথচ ওয়াহাবিরা ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলোও ধ্বংস করে দিচ্ছে যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মগুলো এইসব নিদর্শন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে। এটা ইসলাম ও মানব সভ্যতার জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

ওয়াহাবিরা  অতীতেও জান্নাতুল বাকিতে হামলা চালিয়ে নিষ্পাপ ইমামদের মাজার ধ্বংস করেছিল। প্রথমবার তারা হামলা চালিয়েছিল হিজরি ১২২১ সালে (১৮০০ খ্রিস্টাব্দে)। (এ সময় হিজাজে সৌদি ওয়াহাবিদের গঠিত প্রথম বিদ্রোহী ও অবৈধ সরকারটি নির্মূল হয়েছিল তুরস্কের ওসমানিয় খেলাফতের মাধ্যমে। ) সে সময়  ওয়াহাবিরা দেড় বছর ধরে মদীনাকে অবরুদ্ধ করে শহরটি দখল করতে সক্ষম হয় এবং বিশ্বনবী (সা.) পবিত্র মাজারের দামী পাথর ও সোনা-রূপাসহ মূল্যবান জিনিষগুলো লুট করে এবং জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাট চালায়। তারা হামলা পবিত্র মক্কায়ও হামলা চালিয়েছিল।  

তারা ওই একই বছর কেবল বিশ্বনবী (সা.)র মাজার ছাড়া মক্কা ও মদীনায় সব মাজার ধ্বংস করে। শ্রদ্ধার জন্য নয়বরং জনগণের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে ও ভয়াবহ পরিণামের ভয়ে বিশ্বনবী (সা.)র মাজার ধ্বংস করার সাহস তারা করেনি। ওয়াহাবিরা মক্কা ও মদিনার কাজি বা বিচারকদের অপসারণ করে সেখানে নিজেদের কাজি নিয়োগ করে। নবনিযুক্ত ওয়াহাবি কাজি বিশ্বনবী (সা.)র মাজার বা কবর জিয়ারত থেকে জনগণকে বিরত রাখার চেষ্টা করতেন। মক্কা ও মদিনার জনগণকে জোর করে ওয়াহাবি মতবাদ মেনে নিতে বাধ্য করেছিল ওয়াহাবিরা।

ধর্মপ্রাণ সুন্নি ও শিয়া মুসলমানরা অর্থ ব্যয় করে আবারও জান্নাতুল বাকির মাজারগুলো পুনর্নির্মাণ করেন। কিন্তু ওয়াহাবিরা দ্বিতীয়বার মক্কা দখলের পর পর ১৩৪৪ বা ১৩৪৫ হিজরিতে তথা ১৯২৫ সালে মদীনা অবরোধ করে এবং প্রতিরোধাকামীদের পরাজিত করে এই পবিত্র শহর দখল করে।  ওসমানিয় পুলিশদের শহরের বাইরে হটিয়ে  দিয়ে এবারও তারা জান্নাতুল বাকিতে অবস্থিত নবী (সা.)- পরিবারের নিষ্পাপ ইমামদের মাজারসহ সব মাজার ধ্বংস করে এবং লুটপাট চালায়। মুসলমানরা এই দিনটিকে ইয়াওমুল আলহাদাম বা ধ্বংসের দিন বলে অভিহিত করেছেন।

No comments:

Post a Comment

 
back to top