বৈশাখঃ
বৈশাখের প্রথম জলে আশুধান দ্বিগুণ ফলে।
বৈশাখের প্রথমে বৃষ্টি ভাল হলে সে বছর আউশ ধান দ্বিগুণ ফলন হয় (খনার বচন)
‘বিশাখা নক্ষত্র’ এর নাম অনুসারে বাংলা
সনের প্রথম মাস বৈশাখ এর নাম করন করা হয়েছে। এই মাসের প্রথম দিন বাংলা নববর্ষ
হিসাবে পরিচিত যা বাঙ্গালীর প্রানের উৎসব। প্রচণ্ড দাবদাহে আর খরতাপে বাংলা ঋতুর
প্রথম মাস বৈশাখের আবির্ভাব হয়।
জ্যৈষ্ঠঃ
জ্যৈষ্ঠতে তারা ফুটে তবে জানবে বর্ষা বটে।
জ্যৈষ্ঠ মাসে আকাশে যদি অনেক তারা দেখা যায় তাইলে সেই বছর বর্ষা বেশি হবে (খনার বচন)
‘জ্যেষ্ঠা নক্ষত্র’ এর নাম অনুসারে জ্যৈষ্ঠ
মাসের নামকরন করা হয়েছে। মধুমাস হিসাবে খ্যাত জ্যৈষ্ঠ মাসে একদিকে প্রকৃতি তেতে
উঠে, গরমে কাতর হয় মানুষ, অন্য দিকে উদার প্রকৃতি মানুষ কে তৃপ্ত করার জন্য নানা
রকমের দেশিয়, রসালো ও সুস্বাদু ফলের পসরা সাজিয়ে রাখে।
আষাঢ়ঃ
‘উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়া নক্ষত্র' এর নাম অনুসারে আষাঢ় মাসের
নাম করন করা হয়েছে। গ্রীষ্মের অগ্নিঝরা দিনগুলি যখন প্রকৃতি কে বিবর্ণ ও শুষ্ক এবং
জনজীবন কে করে অসহনীয়, তখনি আষাঢ়ে রিমঝিম বৃষ্টি প্রকৃতি কে করে তোলে সজীব। কদম
ফুলের চোখ জুড়ানো শোভা সবার মন কে ছুয়ে যায় এই আষাঢ়ে।
শ্রাবণঃ
‘শ্রবণা নক্ষত্র’ এর নাম অনুসারে শ্রাবণ
মাসের নামকরণ করা হয়েছে। শ্রাবণের আগমনে থৈথৈ পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয় নদী-নালা,
খাল-বিল ও পুকুর ডোবা। বিলে-ঝিলে ফোটে জাতীয় ফুল শাপলা।
ভাদ্রঃ
‘উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্র’ এর নাম অনুসারে
ভাদ্র মাসের নাম করন করা হয়েছে। সূর্যের খরতাপে অসহনীয় গরম বিরাজ করে সর্বত্র।
গাছে গাছে তাল গুলো পেকে কালচে লাল রং ধারন করে। নদীর কূলে কূলে কাশবনের মায়াবি
শোভা সবার মনে স্নিগ্ধতার ছোঁয়া দিয়ে যায়।
আশ্বিনঃ
‘আশ্বিনী নক্ষত্র’ এর নাম অনুসারে আশ্বিন মাসের
নাম করন করা হয়েছে। এ সময় স্বচ্ছ শিশির ভিজিয়ে দেয় তৃণরাজি, বৃক্ষরাজির সবুজ পাতা
কে, ঝরে পরে শিউলী ফুল। বাঙ্গালী হিন্দু সম্প্রদায়ের তাদের বৃহত্তম উৎসব দুর্গা পূজা
পালন করে থাকে এই আশ্বিনে।
কার্তিকঃ
‘কৃত্তিকা নক্ষত্র’ এর নাম অনুসারে কার্তিক
মাসের নাম করন করা হয়েছে। এ সময় প্রকৃতি রং বদলাতে থাকে। হালকা শীতের আমেজ টের
পাওয়া যায় অল্প অল্প হিম বাতাসে।
অগ্রহায়ণঃ
‘মৃগশিরা নক্ষত্র’ এর নাম অনুসারে অগ্রহায়ণ
মাসের নাম করন করা হয়েছে। এই মাসে গৃহস্থের ঘরে ঘরে নতুন আমন ধান ওঠে। শুরু হয়
নবান্ন উৎসবের ধুম। এই মাসের শুরুতেই নতুন চালের পিঠা-পুলির গন্ধে মাতোয়ারা থাকে
গ্রাম বাঙ্গালার পরিবেশ।
পৌষঃ
‘পুষ্যা নক্ষত্র’ এর নাম অনুসারে পৌষ মাসের
নাম করন করা হয়েছে। পৌষ আসে কুয়াশার চাদর জড়িয়ে। শীতের হিম আমেজ আর খেজুরের রসে
পিঠা বানানোর মধ্য দিয়ে প্রকৃতিতে শুরু হয় এক নতুন পার্বণ। এসময় গ্রামে গ্রামে পৌষ
মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
মাঘঃ
‘মঘা নক্ষত্র’ এর নাম অনুসারে মাঘ মাসের নাম করন করা হয়েছে। মাঘে শীত আরও
জেঁকে বসে। কনকনে শীতে, সবাই গ্রামের উঠানে খড়কুটোতে আগুন জ্বালিয়ে শীত পোহায়। ঘন
কুয়াশায় প্রকৃতি জবুথবু হয়ে পড়ে।
ফাল্গুনঃ
‘উত্তর ফাল্গুনী নক্ষত্র’ এর নাম অনুসারে ফাল্গুন
মাসের নাম করন করা হয়েছে। ফাল্গুনে শীতের জরা কাটিয়ে, রুক্ষ প্রকৃতি রঙে বর্ণে
সজীব আর সবুজ হতে শুরু করে। নতুন পাতায়, ফুলে ফুলে কোকিলের কুহু ডাকে ঋতুরাজ বসন্ত
তার আগমনী জানান দেয় এই ফাল্গুনে।
চৈত্রঃ
‘চিত্রা নক্ষত্র’ এর নাম অনুসারে চৈত্র মাসের
নাম করন করা হয়েছে। চৈত্রে প্রকৃতি আবার রুপ বদলায়। কাঠ ফাটা রোদে মাঠ এর ফসলের ক্ষেত
চৌচির হয়, জলাশয় শুকিয়ে আসে।