মদীনায় প্রথম ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মসজিদ ছিল প্রথম সামাজিক প্রতিষ্ঠান যা সরাসরি বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)’র উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল। এই পবিত্র প্রতিষ্ঠানটি গত ১৪০০ বছরে বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। কখনো কখনো মসজিদের বাহ্যিক চেহারাকে রাজপ্রাসাদের আকৃতি দেয়া হলেও ইবাদত-বন্দেগীর পবিত্র স্থান হিসেবে মসজিদের ভূমিকা কখনো ম্লান হয়ে যায়নি।
মসজিদ হচ্ছে কিবলামুখী একটি পবিত্র স্থান যা নির্ধারিত হয়েছে জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মসজিদ দেয়াল দিয়ে ঘেরা থাকলেও কোথাও কোথাও দেয়ালবিহীন মসজিদও দেখতে পাওয়া যায়। কোনো কোনো মসজিদে রয়েছে রেশমি কার্পেট আবার কোনো কোনো মসজিদে বালুর তপ্ত ভূমির উপরে মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে হয়। কোনো কোনো মসজিদে রয়েছে সুউচ্চ ছাদ, আকাশচুম্বী মিনার এবং দেয়ালে রয়েছে চোখ ধাঁধানো কারুকাজ। আবার কোনো কোনো মসজিদে এসবের কোনো কিছুর বালাই নেই। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, পবিত্রতা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জিনের দিক দিয়ে এই দুই ধরনের মসজিদের মধ্যে কোনো গুণগত পার্থক্য নেই। ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য মসজিদের বাহ্যিক বেশভূষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তবে হ্যাঁ মসজিদে যতই দারিদ্রের ছাপ থাকুন না কেন এটিকে পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি ও পাকপবিত্র রাখতে হবে।
মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার পরপরই সর্বপ্রথম ইসলামি শাসনকাজ পরিচালনার স্থান হিসেবে মসজিদ নির্মাণের কাজে হাত দেন। শুধু নামাজ আদায় নয় সেইসঙ্গে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার লক্ষ্যে তিনি এই পবিত্র স্থাপনাটি নির্মাণ করেছিলেন। যে স্থানে শাসক ও শাসিত দুজনই উপস্থিত থাকবেন এবং যেখানে আল্লাহর হুকুম-আহকাম শিক্ষা দেয়া হবে। সাহাবীদের সঙ্গে বিশ্বনবীর মিলনমেলা ছিল এই মসজিদ। রাসূলুল্লাহ (সা.) অত্যন্ত আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের কাছে ধর্মের দাওয়াত দিতেন। সমাজে আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে কোনো কাজ তিনি আগে নিজে করে দেখাতেন এবং তারপর সবাইকে করতে বলতেন। দূর-দূরান্ত থেকে কেউ বিশ্বনবীর সঙ্গে দেখা করতে আসলে তার সঙ্গে তিনি মসজিদে সাক্ষাৎ করতেন। কোনোকিছু জনগণকে জানাতে চাইলে এই মসজিদে বসেই তিনি নিজে কিংবা কোনো একজন সাহাবীর মাধ্যমে তা সবাইকে জানাতেন।
মদীনায় ইসলামের প্রথম মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল কুবা নামক স্থানে। নির্ভরযোগ্য হাদিসগ্রন্থে এই মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস এভাবে বর্ণিত হয়েছে- মহানবী (সা.) সোমবার দিন মদীনার কুবা এলাকায় প্রবেশ করেন। এলাকাটিতে ছিল প্রচুর খেজুরের বাগান। এই এলাকার মানুষ সর্বপ্রথম আল্লাহর রাসূলকে স্বাদরে গ্রহণ করেন। কুবায় প্রবেশ করার পর তিনি চারদিন সেখানেই অবস্থান করেন। এরইমধ্যে হযরত আলী (আ.) এবং ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহাসহ তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা সেখানে পৌঁছে যান। এরপর তাঁরা সবাই মিলে মদীনার দিকে যাত্রা করেন। মদীনা সে সময় ইয়াসরিব নামে বেশি পরিচিত ছিল। কুবায় অবস্থান করার দিনগুলোতে বিশ্বনবী (সা.) প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন যার নাম দেয়া হয় কুবা মসজিদ। তিনি এই মসজিদে নামাজ আদায় করার ব্যাপারে বলেন, “যে ব্যক্তি আমার নির্মিত মসজিদ অর্থাৎ কুবা মসজিদে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে তার আমলনামায় একটি ওমরাহ হজের সওয়াব লিখে দেয়া হবে। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ (সা.) মূল মদীনা শহরে বসবাস শুরু করলেও সপ্তাহে একবার- কখনো শনিবার বা কোনো কোনো সপ্তাহে সোমবার নামাজ আদায় করার জন্য কুবা মসজিদে যেতেন।
আগেই যেমনটি বলেছি, মহানবী (সা.) চারদিন কুবায় অবস্থানের পর সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মূল মদীনা শহরের দিকে অগ্রসর হন। স্থানীয় জনগণ বিশ্বনবী ও তাঁর সাহাবীদের বিপুল সংবর্ধনা দেন। প্রতি গোত্রের প্রতিনিধিরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজ নিজ গোত্রে বিশ্বনবীকে আতিথেয়তা গ্রহণের আমন্ত্রণ জানাতে থাকেন। কেউ কেউ এসে রাসূলের উটের রশি ধরে টানাটানি শুরু করেন। বিশ্বনবী একটু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। কাকে রেখে কাকে খুশি করবেন! এ অবস্থায় তিনি নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানান। বলেন, আপনারা উটের রশি ছেড়ে দিন। দেখি উটটি কোথায় গিয়ে বসে পড়ে। সে যার বাড়ির সামনে বসে পড়বে আমি সেই বাড়ির আতিথেয়তা গ্রহণ করব।
এই ঘটনায় দু’টি উল্লেখযোগ্য বিষয় দেখতে পাওয়া যায়। প্রথমত, রাসূলের উটটি যেখানে থেমেছিল এবং যেখানে এখন মসজিদে নববী রয়েছে সেটি নির্বাচন করে দিয়েছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। এমনক এটি নির্ধারণে বিশ্বনবীরও হাত ছিল না। দ্বিতীয়ত, এই পদ্ধতি অনুসরণ করার ফলে মদীনার কোনো গোত্র মন খারাপ করার সুযোগ পেল না। আল্লাহর রাসূলের উটটি বনি মালিক বিন নাজ্জার নামক স্থানে গিয়ে বসে পড়ল। বিশ্বনবী (সা.) ওই জায়গায়ই মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দেন। মসজিদ নির্মাণের কাজে আল্লাহর রাসূল নিজে অংশগ্রহণ করেন এবং তিনি অন্য সবার চেয়ে বেশি পরিশ্রম করেন। তাঁর পরিশ্রম দেখে সাহাবীরা বহুবার তাঁকে বিশ্রাম নেয়ার অনুরোধ করলেও তিনি সে অনুরোধ রক্ষা না করে সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মসজিদ নির্মাণের কাজে অংশ নিয়েছেন।
মসজিদে নববীকে তখনকার যুগের একটি অনন্য স্থাপনা হিসেবে নির্মাণ করেছিলেন বিশ্বনবী। সে সময় অন্য কোনো স্থাপত্যশিল্প, এমনকি অন্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোর নির্মাণশৈলির সঙ্গে এর কোনো মিল ছিল না; বরং ইসলামের গতিপ্রকৃতির সঙ্গে এই মসজিদ ছিল সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ। নবুওয়াত প্রাপ্তির আগে বিশ্বনবী তৎকালীন শাম বা সিরিয়াসহ আরো কিছু দেশ সফর করেছিলেন। এসব সফরে তিনি বহু গির্জা ও সিনাগগ ঘুরে দেখেছিলেন তিনি। নিঃসন্দেহে এসব উপাসনালয়ের নির্মাণশৈলি রাসূলুল্লাহ (সা.) র মাথায় ছিল। মসজিদে নববী তৈরির সময় ওই সব উপাসনালয় থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি নকশা তিনি দাঁড় করান। ভূমি থেকে এক মিটার উচ্চতা পর্যন্ত মসজিদের দেয়াল পাথর দিয়ে নির্মিত হয়। এরপর ছাদ পর্যন্ত দেয়া হয় রোদে পোড়ানো ইট। আর ছাদ তৈরি হয় খেজুর পাতা দিয়ে।
মসজিদে নববী তৈরি হওয়ার পর এর একাংশকে দরিদ্র মানুষের বসবাসের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব দরিদ্র মানুষের বেশিরভাগই ছিলেন মক্কা থেকে আসা মুহাজির। মক্কার কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে তাঁরা নিজেদের ঘর-বাড়ি, সহায়-সম্বল ফেলে এক কাপড়ে রাসূলের সঙ্গে হিজরত করে মদীনায় গিয়েছিলেন। বিশ্বনবীর এসব সাহাবীকে আসহাব আস-সুফফা বলা হয়। মসজিদে নববীর সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.)’র বসবাসের জন্য তৈরি হয় একটি ঘর। পরবর্তীতে সাহাবীদের মধ্যে সামর্থ্যবানরাও মসজিদের পাশে ঘর তৈরি করে মসজিদ অভিমুখে একটি করে দরজা রেখেছিলেন। নামাজের সময় হলে তারা ওই দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতেন। তৃতীয় হিজরিতে বিশ্বনবী (সা.) আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) ছাড়া আর সবার ঘরের মসজিদ অভিমুখী দরজা বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.)’র ইন্তেকালের পর মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদে নববীতে মুসল্লিদের স্থান সংকুলানের সমস্যা দেখা দেয়। ফলে খলিফারা এই মসজিদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন। মসজিদ সম্প্রসারণের এই কাজ কয়েক ধাপে চলে এবং আব্বাসীয় শাসনামলে এর আয়তন দাঁড়ায় ৯,০০০ বর্গমিটার। ওসমানীয় শাসনামলে মসজিদে নববী কয়েকবার পুনর্নির্মাণ করা হয়। ১২৬৫ হিজরিতে সুলতান আব্দুল হামিদ এই মসজিদ সংস্কারের বিশাল পরিকল্পনা হাতে নেন যা বাস্তবায়ন করতে ১৩ বছর সময় লাগে।
মসজিদে নববীর শিলালিপিতে বর্তমানে রাসূলের আহলে বাইত, নিষ্পাপ ইমাম ও খলিফাসহ আরো কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সাহাবীর যেসব নাম আজও চোখে পড়ে তা ওসমানীয় শাসকদের লেখা। সৌদ রাজবংশ ক্ষমতায় আসার পরও কয়েক দফায় মসজিদে নববীর সংস্কার ও সম্প্রসারণ ঘটানো হয়েছে। মদীনা শহরের সম্মান বৃদ্ধি করেছে এই মসজিদ। বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, হযরত ইব্রাহিম মক্কাকে নিরাপদ শহরে পরিণত করেছেন এবং এর অধিবাসীদের জন্য দোয়া করেছেন। আর আমি মদীনাকে করেছি নিরাপদ।
ইসলামের সোনালি যুগের সব শাসনামলে মসজিদে নববীর সাদামাটা গঠনকাঠামো ধরে রাখা হয়েছে। বিশ্বনবী (সা.)’র ওফাতের পর প্রথম খলিফার শাসনামলে এই মসজিদে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনা হয়নি। দ্বিতীয় খলিফার আমলে শুধুমাত্র মসজিদের আয়তন এবং এর দরজার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তৃতীয় খলিফার আমলে মসজিদের গঠনকাঠামোয় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। এর পিলারগুলোতে টিনের পাত বসানো হয়। তবে উমাইয়ারা ক্ষমতায় আসার পর ইসলামি শাসনব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন আনা হয় যার প্রভাব মসজিদ নির্মাণের ওপরও পড়ে। মসজিদে নববীও এই পরিবর্তনের বাইরে থাকেনি।
মসজিদে নববীর গঠনকাঠামো ছিল অত্যন্ত সাদামাটা। এটির দেয়াল নির্মিত হয় পাথর ও রোদে পোড়ানো ইট দিয়ে। ছাদ দেয়া হয় খেজুর পাতা বিছিয়ে। মসজিদের মেঝেতে নুড়ি পাথর ও বালুর মিশ্রণ ছড়িয়ে দেয়া হয় যাতে ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি চুঁইয়ে পড়লে তা দ্রুত শুকিয়ে যায়। ইতিহাসে এসেছে, মসজিদে নববী তৈরির কিছুদিন পরই মসজিদের ভেতরে বৃষ্টির পানি পড়ে জমে গিয়েছিল। এ অবস্থায় সাহাবীরা নুড়ি পাথর ও বালু এনে মসজিদের মেঝেতে ছড়িয়ে দেন যার ফলে পানি শুকিয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) এটি দেখে বলেন, খুব ভালো কাজ হয়েছে। তখন থেকে বহুকাল পর্যন্ত মসজিদে নববীর মেঝেতে বালু ও নুড়ি পাথর বেছানো ছিল। অবশ্য বর্তমানে এই মসজিদের মেঝেতে রয়েছে বিশালাকৃতির দামী কার্পেট।
মসজিদটি নির্মাণের সময় এটিতে যাতায়াতের জন্য তিনটি দরজা রাখা হয়। অবশ্য পরে মসজিদুল আকসা থেকে মসজিদুল হারামের দিকে কেবলা পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার পর মসজিদের পেছনের দিকের দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পরিবর্তে উত্তর দিকে আরেকটি দরজা খোলা হয়। মসজিদের পশ্চিম দিকে ছিল আরেকটি দরজা যার নাম ছিল বাবে আতিকা। আতিকা ছিলেন মক্কার এক নারী যিনি ইসলাম গ্রহণের পর হিজরত করে মদীনায় চলে এসেছিলেন। দরজাটি এই নারীর বসবাসের ঘরের দিকে মুখ করা ছিল বলে এর নাম দেয়া হয় বাবে আতিকা বা আতিকার দরজা। এই দরজাটি বাবে রহমত নামেও প্রসিদ্ধ। এই নামকরণ সম্পর্কে ইতিহাসে এসেছে- একবার এক ব্যক্তি মসজিদে নববীতে এসে রাসূলুল্লাহ (সা.)’র কাছে বৃষ্টির জন্য দোয়া করার অনুরোধ জানান। আল্লাহর রাসূল দোয়া করলে টানা সাতদিন ধরে মদীনায় প্রবল বর্ষণ হয়। এ অবস্থায় বন্যার আশঙ্কায় লোকজন তাঁর কাছে এসে আবার বৃষ্টি বন্ধ করার জন্য দোয়া করার অনুরোধ জানায়। এবার বিশ্বনবী আবার দোয়া করলে বৃষ্টি থেমে যায়। বৃষ্টি যেহেতু আল্লাহর রহমত তাই এই দরজার নাম রাখা হয় বাবে রহমত বা রহমতের দরজা।
এই দরজা দিয়েই রাসূলুল্লাহ মসজিদে যাতায়ত করতেন বলে এটিকে বাবে নববীও বলা হয়। মসজিদের পূর্বদিকে রয়েছে আরেকটি দরজা যেটিকে বাবে জিবরাইল বা জিবরাইলের দরজা বলে অভিহিত করা হয়। বলা হয়ে থাকে, বনু কুরাইজার যুদ্ধের সময় আল্লাহর রাসূল এই দরজার কাছে হযরত জিবরাইলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন বলে এর নাম দেয়া হয় বাবে জিবরাইল।
অবশ্য ধীরে ধীরে মসজিদে নববীর দরজার সংখ্যা বাড়তে থাকে। কারণ, অনেক সাহাবী মসজিদের আশপাশে বসবাসের জন্য ঘর নির্মাণ করেছিলেন। এসব ঘরের দু’টি দরজা থাকত। একটি ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার জন্য আরেকটি ঘর থেকে মসজিদে যাতায়াতের জন্য। এই অবস্থা তৃতীয় হিজরি পর্যন্ত চলতে থাকে। ওই বছর আল্লাহর রাসূল নির্দেশ দেন, হযরত আলী (আ.)’র ঘর ছাড়া অন্য সবার ঘরের সঙ্গে মসজিদের দরজাগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। অবশ্য বর্তমানে এই মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে সাতটি প্রধান ফটক এবং ছোটবড় ৮১টি দরজা।
মসজিদে নববীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাম রওজায়ে মুতাহ্হারা। হাদিসে এই অংশে উপস্থিত হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। বিশ্বনবী (সা.) এই স্থানকে বেহেশতের বাগান বলে উল্লেখ করেছেন। রাসূলের পবিত্র কবর, তাঁর মিম্বর ও মেহরাব এই স্থানে অবস্থিত। যে স্থান থেকে এই মহামানবের পবিত্র ও নূরানি আত্মা আল্লাহর সাক্ষাতে চলে গেছে সেই স্থানেই তাঁর দেহ মোবারক দাফন করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রথম ও দ্বিতীয় খলিফাকে রাসূলুল্লাহর কবরের পাশে দাফন করা হয়। এগুলোর উত্তর পাশের একটি স্থানের নামকরণ করা হয়েছে নবীনন্দিনী হযরত ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহার কবরের নামে। যারা মনে করেন হযরত ফাতেমাকে তাঁর নিজ ঘরে দাফন করা হয়েছে তারা এই নামকরণ করেছেন। অবশ্য ইতিহাসে তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করার কথা বলা হয়েছে এবং সুন্নী মুসলমানরা এই বর্ণনাকে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করেন। রাসূলুল্লাহর কবর যে বিশাল কক্ষে অবস্থিত তাতে রয়েছে চারটি মজবুত পিলার এবং এর উপরে রয়েছে সবুজ রঙের একটি সুদৃশ্য গম্বুজ।
মসজিদে নববীর আরেকটি পবিত্র অংশ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সা.)’র মিম্বর। বর্ণনায় এসেছে, প্রথম দিকে আল্লাহর নবী একটি খেজুর গাছে হেলান দিয়ে খুতবা দিতেন। একদিন একজন সাহাবী খুতবা দেয়ার জন্য মিম্বর তৈরির প্রস্তাব দিয়ে বলেন, এটি নির্মিত হলে আল্লাহর রাসূল যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হবেন না তেমনি সমবেত সব মুসল্লি উনাকে দেখতে পাবেন। বিশ্বনবী (সা.) এ প্রস্তাব গ্রহণ করেন। তৈরি হয় ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মিম্বর। এটিতে দুই ধাপ সিঁড়ি এবং এরপর রাসূলের বসার স্থান তৈরি হয়। পরবর্তীতে একজন কাঠমিস্ত্রি ওই তিন ধাপের মিম্বরের উপর আরো ছয় ধাপ সিঁড়ি নির্মাণ করেন। ফলে এটি নয় ধাপের মিম্বরে পরিণত হয়।
আব্বাসীয় খলিফাদের শাসনামলে এই মিম্বর কয়েকবার পুনর্নির্মাণ ও সম্পূর্ণ নতুনভাবে তৈরি হয়। ৬৫৪ হিজরিতে এক দুর্ঘটনায় মসজিদে নববীতে আগুন লেগে মিম্বরটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। ঐতিহাসিক দলিলে পাওয়া যায়, ওই পোড়া মিম্বরটির ভস্মীভূত ছাই বর্তমানে যে স্থানে মিম্বর আছে তার ঠিক নীচে দাফন করা হয়েছিল। বর্তমানে মসজিদে নববীতে যে মিম্বরটি আছে সেটি মর্মর পাথরের তৈরি এবং এর উপরের কারুকার্যগুলি স্বর্ণ দিয়ে করা হয়েছে। ১২ ধাপ সিঁড়ির এই মিম্বরটি ৯৯৯ হিজরিতে তৎকালীন ওসমানীয় সুলতান এ মসজিদকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.)’র জীবদ্দশায় মুসলমানরা মেহরাব নামক কোনো স্থানের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। পরবর্তীতে ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের শাসনামলে রাসূলুল্লাহ (সা.)’র সিজদা দেয়ার স্থানে একটি মেহরাব নির্মিত হয়। বর্তমানে মসজিদে নববীসহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মসজিদের সামনের দিকে ঠিক মাঝখানে ইমাম সাহেবের নামাজে দাঁড়ানোর জন্য যে স্থান নির্ধারিত রয়েছে সেটিকে মেহরাব বলা হয়। মেহরাবের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি মসজিদে নামাজ আদায় করতে এসে মেহরাবের দিকে তাকান তিনি নিজের চোখে কাবা শরীফ দেখার সওয়াব লাভ করেন। মসজিদে নববীতে বর্তমানে মূল মেহরাবের পাশাপাশি আরো কয়েকটি ছোট মেহরাব রয়েছে। এগুলোর একটিকে ‘মেহরাবে তাহাজ্জুদ’ বলা হয়। হযরত ফাতিমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহার ঘরের পেছনে এই মেহরাবটি অবস্থিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো কোনো রাতে এখানে দাঁড়িয়ে নফল ইবাদতে মশগুল হতেন।
মসজিদে নববীর আরেকটি মেহরাবের নাম মেহরাবে ফাতেমা (সা. আ)। এটি তখনকার সময়ে হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহার ঘরে মধ্যে ছিল এবং এখানে দাঁড়িয়ে তিনি নামাজ আদায় করতেন। বর্তমানে এই মেহরাবটি রাসূলুল্লাহ (সা.)’র হুজরার মধ্যে পড়েছে। এ মসজিদের আরেকটি মেহরাবের নাম মেহরাবে ওসমানি। ওসমানীয় সুলতানদের নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে। অবশ্য কেউ কেউ বলেন, তৃতীয় খলিফা ওসমান ইবনে আফফানের নামে এই নামকরণ হয়েছিল। রাসূলের মেহরাবের পেছনে অবস্থিত এই মেহরাবটি কিবলার দিকে মুখ করা। বর্তমানে মসজিদে নববীর ইমাম সাহেব এই মিহরাবে দাঁড়িয়ে জামাতের ইমামতি করেন
মসজিদের এই বরকতপূর্ণ ফজিলতের কারণে ইসলামের সোনালী যুগে মুসলমানরা আল্লাহর ঘর নির্মাণে ব্যাপক মনোনিবেশ করেছিলেন। মহানবী (সা.)’র বাস্তবধর্মী দাওয়াতের বাণী তাদের ওপর প্রভাব ফেলেছিল বলে দিকে দিকে মসজিদ নির্মাণের সাড়া পড়ে গিয়েছিল। আল্লাহর রাসূল মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতে করেই নিজের হাতে কুবা মসজিদ ও মসজিদে নববী নির্মাণ করেছিলেন। এরপর মদীনায় বিভিন্ন গোত্রের বসবাসের স্থানে আরো নয়টি মসজিদ নির্মিত হয়। বিশ্বনবী (সা.) নিজে গিয়ে এসব মসজিদের স্থান ও কিবলার দিক সঠিকভাবে নির্ধারণ করে দিতেন। মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ’র ইমামতিতে প্রথম জামাতটি অনুষ্ঠিত হতো।
রাসূলে খোদা (সা.) যেখানেই সফরে যেতেন সেখানেই নামাজ আদায় করার জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করতেন। এভাবে তিনি মসজিদ নির্মাণের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেন। ধীরে ধীরে মুসলিম সমাজের পরিচিতির প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে মসজিদ। অমুসলিমরা ইসলাম গ্রহণের পরপরই প্রথম যে কাজটি করতেন তা হলো নিজ নিজ এলাকায় মসজিদ নির্মাণ করা। মসজিদ নির্মাণের মাধ্যমে ইবাদত-বন্দেগী করার পাশাপাশি আরেকটি লক্ষ্য অর্জিত হতো। আর তা হলো, মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা। রাসূলুল্লাহ (সা.)’র যুগে একবার মুনাফিকরা মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার স্থান হিসেবে মসজিদ নির্মাণ করে। বিশ্বনবী এটি বুঝতে পেরে ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। তিনি ওই মসজিদে নামাজ আদায় তো করেনইনি, উল্টো মসজিদটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। পবিত্র কুরআনে এই মসজিদকে ‘মসজিদে যিরার’ বা ক্ষতি সাধানকারী মসজিদ নামে অভিহিত করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ এই মসজিদ সম্পর্কে সূরা তওবার ১০৭ নম্বর আয়াতে বলেছেন: “আর যারা জিদের বশে এবং কুফরীর তাড়নায় মসজিদ নির্মাণ করেছে মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ঐ লোকের জন্য ঘাঁটি স্বরূপ যে পূর্ব থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে, আর তারা অবশ্যই শপথ করবে যে, আমরা কেবল কল্যাণই চেয়েছি। পক্ষান্তরে আল্লাহ সাক্ষী যে, তারা সবাই মিথ্যুক।”
রাসূলের যুগে কিছু মুনাফিক ইসলামের পোশাক পরে মুসলমানদের ক্ষতি করতে চেয়েছিল। তারা মসজিদকে ইসলামের বিরুদ্ধে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে মুসলিম সমাজকে ভেতর থেকেই ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এ সময় বিশ্বনবী (সা.)’র বিপ্লবী ও সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে মসজিদে যিরার ধ্বংস করে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থান নির্ধারিত হয়। এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র ও শত্রুতার ঘাঁটি ধ্বংস করে ফেলতে হবে সেটিকে যদি বাহ্যিকভাবে পবিত্র স্থান বলেও মনে হয়।
আল্লাহর রাসূলের এই মসজিদের অনেকগুলো উস্তোয়ানা বা স্তম্ভ ১,৪০০ বছর পর আজও টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। এসব স্তম্ভের মধ্যে আটটি বেশি বিখ্যাত। বিশ্বনবীর জামানায়ই এগুলোর নামকরণ করা হয়েছিল। বর্তমানে এই আটটি স্তম্ভের ওপর সাদা রঙের প্রলেপ দিয়ে পরবর্তীতে নির্মিত পিলারগুলো থেকে এগুলোকে আলাদা করা হয়েছে।
মসজিদে নববীর এই ফজিলতপূর্ণ ও বিখ্যাত স্তম্ভগুলোর একটির নাম ‘উস্তোয়ানা তওবা’। আহযাবের যুদ্ধে আবুলুবাবা’র বিশ্বাসঘাতকতা ও তওবা করে তার ইসলামে প্রত্যাবর্তনের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে এই পিলারটির নামকরণ করা হয়েছে। পঞ্চম হিজরিতে আহযাবের যুদ্ধের পর আবুলাবাবা মুসলমানদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার কারণে অনুতপ্ত হন। তার দেহমন পাপের অনুভূতিতে ছেয়ে যায়। এই পাপ থেকে মুক্তি পেতে বিশ্বনবী (সা.)’র কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে তিনি সোজা মসজিদে নববীতে চলে যান। সেখানে গিয়ে একটি স্তম্ভের সঙ্গে নিজেকে বেঁধে ফেলে সবাইকে বলে দেন, আল্লাহর রাসূল ছাড়া কেউ যেন তার গায়ে বাধা দড়িগুলো খুলে না দেয়। তখন থেকে এই স্তম্ভটির নাম হয় ‘উস্তোয়ানা তওবা’। বিভিন্ন বর্ণনায় এই স্তম্ভের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার অফুরন্ত ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বনবী (সা.)’র হুজরা ও কবরের পাশের দ্বিতীয় স্তম্ভটিই হলো ‘উস্তোয়ানা তওবা’।
মসজিদে নববীর আরেকটি স্তম্ভের নাম ‘উস্তোয়ানা মুখাল্লাকা’। বিশ্বনবী যে স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতেন তার সবচেয়ে কাছের স্তম্ভ এটি। বর্তমানে এই স্তম্ভের শীর্ষে সোনালি রং দিয়ে গোলাকৃতিতে লেখা রয়েছে ‘উস্তোয়ানাতুল মুহাল্লাকা’। এই স্তম্ভের কাছে একটি সুগন্ধী পোড়ানো হতো যার ফলে গোটা মসজিদ আতরের ঘ্রাণে ভরে উঠত।
মসজিদে নববীর প্রধান স্তম্ভগুলোর ঠিক মাঝখানে রয়েছে ‘উস্তোয়ানা আয়েশা’। এটি মুহাজিরান বা আল-কুর’আ’ স্তম্ভ নামেও সমধিক পরিচিত। বর্তমানে এই স্তম্ভের উপরে লেখা রয়েছে ‘উস্তোয়ানাতুন আয়েশা’।
মসজিদে নববীর আরেকটি স্তম্ভের নাম ‘উস্তোয়ানা তাহাজ্জুদ’। বর্ণনায় এসেছে, সবাই যখন এশার নামাজ আদায় করে যার যার বাড়িতে চলে যেত তখন আল্লাহর রাসূল এই স্তম্ভের পাশে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। এ কারণে এটির নাম হয়েছে তাহাজ্জুদ স্তম্ভ। এই স্তম্ভটি নবী নন্দিনী হযরত ফাহেমা সালামুল্লাহি আলাইহার ঘরের ঠিক পেছনে অবস্থিত। এখানে মরমর পাথরে খোদাই করে আরবিতে যে কথাটি লেখা আছে তার অর্থ হলো- “এটি বিশ্বনবী (সা.)’র তাহাজ্জুদের স্থান।”
রাসূলের পবিত্র মাজার কক্ষের উত্তর অংশের সঙ্গে লাগোয়া অবস্থায় রয়েছে ‘উস্তোয়ানা মুরাব্বাআ’ল কাব্র’। এটিকে মাকামে জিবরাইলও বলা হয়। বর্তমানে এই স্তম্ভটি বাইরে থেকে দেখা যায় না। এই স্তম্ভের ঠিক পেছনেই হযরত আলী (আ.) ও ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহার ঘরের প্রবেশ পথ ছিল। এই স্তম্ভের ফজিলত সম্পর্কে আবিল হামরা বলেছেন, আমি রাসূলে খোদাকে দেখেছি তিনি টানা ৪০ দিন ধরে প্রতিদিন আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসেইনের বাড়ির সামনে আসতেন এবং দরজার ওপর হাত রেখে বলতেন, “হে আহলে বাইত তোমাদের ওপর সালাম।” সেইসঙ্গে তিনি সূরা আহযাবের ৩৩ নম্বর আয়াত পাঠ করতেন যেখানে বলা হয়েছে, হে আহলে বাইত নিশ্চয় আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।
মসজিদে নববীর তওবা স্তম্ভের ঠিক পূর্ব পাশে কিবলামুখী যে স্তম্ভটি রয়েছে তার নাম ‘উস্তোয়ানা সারীর’। রাসূলুল্লাহ (সা.) পবিত্র মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে নববীতে এতেকাফ করার সময় এই স্তম্ভের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতেন এবং ইবাদত করতে করতে ক্লান্তি আসলে এখানেই বিশ্রাম নিতেন।
উস্তোয়ানা সারীরের পাশেই রয়েছে ‘উস্তোয়ানা মাহ্রাস’। হযরত আলী (আ.) এই স্তম্ভের পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্বনবী (সা.)কে পাহারা দিতেন। এ কারণে এই স্তম্ভকে ‘উস্তোয়ানা আলী ইবনে আবি তালিব’ও বলা হয়।
মাহরাসের দক্ষিণ পাশে কিবলার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে থাকা স্তম্ভটির নাম ‘উস্তোয়ানা ওফুদ’। মহানবী (সা.)’র দৈনন্দিন একটি কাজ ছিল মদীনার গোত্র প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। তিনি এই স্তম্ভের পাশে বসে সেই সাক্ষাতের কাজটি সম্পন্ন করতেন। এটি পরবর্তীতে ‘উস্তোয়ানাতুল ওফুদ’ নামে পরিচিতি পায় যে নামটি আজও এই স্তম্ভের গায়ে লেখা রয়েছে।